পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\')8&) द्रौव-ब्रछमांबर्णौ গ্রহণের উপলক্ষ্য খুজে বেড়াচ্ছে। আমাদের আত্মাও অনির্দিষ্টতার কুহেলিক থেকে আপনাকে মুক্ত করে বাইরে আনবার জন্যেই কেবলই কর্ম স্থটি করছে। ... কর্মে তার কোনো প্রয়োজনই নেই, যা তার জীবনযাত্রার পক্ষে আবশ্বক নয়, তাকেd কেবলই সে তৈরি করে তুলছে। কেননা, সে মুক্তি চায়। সে আপনার অন্তরাচ্ছাদন থেকে মুক্তি চায়, সে আপনার অরূপের আবরণ থেকে মুক্তি চায়। সে আপনাকে দেখতে চায়, পেতে চায়। ঝোপঝাড় কেটে সে যখন বাগান তৈরি করে তখন কুরূপতার মধ্য থেকে সে যে সৌন্দর্যকে মুক্ত করে তোলে সে তার নিজেরই ভিতরকার সৌন্দর্য— বাইরে তাকে মুক্তি দিতে না পারলে অস্তরেও সে মুক্তি পায় না। সমাজের যথেচ্ছাচারের মধ্যে সুনিয়ম স্থাপন করে অকল্যাণের বাধার ভিতর থেকে যে কল্যাণকে সে মুক্তি দান করে সে তারই নিজের ভিতরকার কল্যাণ— বাইরে তাকে মুক্তি দিতে না পারলে অস্তরেও সে মুক্তিলাভ করে না। এমনি করে মানুষ নিজের শক্তিকে, সৌন্দর্যকে, মঙ্গলকে, নিজের আত্মাকে, নানাবিধ কর্মের ভিতরে কেবলই বন্ধনমুক্ত করে দিচ্ছে। যতই তাই করছে ততই আপনাকে মহৎ করে দেখতে পাচ্ছে ; ততই তার আত্মপরিচয় বিস্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে । উপনিষৎ বলেছেন ; কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেৎ শতং সমাঃ । কর্ম করতে করতেই শত বৎসর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করবে। যারা আত্মার আনন্দকে প্রচুররূপে উপলব্ধি করেছেন এ হচ্ছে তাদেরই বাণী। র্যারা আত্মাকে পরিপূর্ণ করে জেনেছেন র্তারা কোনোদিন দুর্বল মুহমানভাবে বলেন না— জীবন দুঃখময় এবং কর্ম কেবলই বন্ধন। দুর্বল ফুল যেমন বোটাকে আলগা করে ধরে এবং ফল ফলবার পূর্বেই খসে যায় তার তেমন নন। জীবনকে তারা খুব শক্ত করে ধরেন এবং বলেন, আমি ফল না ফলিয়ে কিছুতেই ছাড়ছি নে। তারা সংসারের মধ্যে কর্মের মধ্যে আনন্দে আপনাকে প্রবলভাবে প্রকাশ করবার জন্যে ইচ্ছা করেন। দুঃখ তাপ তাদের অবসন্ন করে না, নিজের হৃদয়ের ভারে তারা ধূলিশায়ী হয়ে পড়েন না। স্থখ দুঃখ সমস্তের মধ্য দিয়েই র্তারা আত্মার মাহাত্ম্যকে উত্তরোত্তর উদঘাটিত করে আপনাকে দেখেন এবং আপনাকে দেখিয়ে বিজয়ী বীরের মতো সংসারের ভিতর দিয়ে মাথা তুলে চলে যান। বিশ্বজগতে যে শক্তির আনন্দ নিরস্তর ভাঙাগড়ার মধ্যে লীলা করছে— তারই নৃত্যের ছন্দ তাদের জীবনের লীলার সঙ্গে তালে তালে মিলে যেতে থাকে ; তাদের জীবনের আনন্দের সঙ্গে স্বর্যালোকের আনন্দ, মুক্ত সমীরণের আনন্দ, সুর মিলিয়ে দিয়ে অন্তর-বাহিরকে স্থধাময় করে তোলে। র্তারাই বলেন : কুৰ্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিযেৎ শতং সমাঃ । কাজ করতে করতেই শত বৎসর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করবে।