পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা ९९४ অক্ষয়। তাই বললেম । তুমি যখনই আসবে তখনই স্বসময়, এবং যেখানে পদার্পণ করবে সেইখানেই তোমার অধিকার। শ্ৰীশবাবু স্বয়ং বিধাতা সর্বত্র তোমাকে পাসপোর্ট দিয়ে রেখেছেন। একটু বোসো, অবলাকাস্তবাবুকে খবর পাঠিয়ে দিই। (স্বগত) ন৷ পলায়ন করলে চিঠি শেষ করতে পারব না। [ প্রস্থান শ্ৰীশ। চক্ষের সম্মুখ দিয়ে এক জোড়া মায়াস্বর্ণমৃগী ছুটে পালালে। ওরে নিরস্ত্র ব্যাধ, তোর ছোটবার ক্ষমতা নেই। নিকষের উপর সোনার রেখার মতে চকিত চোখের চাহনি দৃষ্টিপথের উপরে যেন আঁকা রয়ে গেল। রসিকের প্রবেশ শ্ৰীশ। সন্ধেবেলায় এসে আপনাদের তো বিরক্ত করি নি রসিকবাৰু ? রসিক। ভিক্ষুকক্ষে বিনিক্ষিপ্ত: কিমিক্ষুবুনীরসো ভবেৎ ? শ্ৰীশবাবু, আপনাকে দেখে বিরক্ত হব আমি কি এতবড়ো হতভাগ্য । ঐশ। অবলাকান্তবাবু বাড়ি আছেন তো ? রসিক । আছেন বৈকি। এলেন বলে । ঐশ । না না, যদি কাজে থাকেন তা হলে তাকে ব্যস্ত করে কাজ নেই— আমি কুঁড়ে লোক, বেকার মানুষের সন্ধানে ঘুরে বেড়াই। রসিক। সংসারে সেরা লোকেরাই কুঁড়ে, এবং বেকার লোকেরাই ধন্য। উভয়ের সম্মিলন হলেই মণিকাঞ্চনযোগ । এই কুঁড়ে-বেকারের মিলনের জন্যেই তো সন্ধেবেলাটার স্বষ্টি হয়েছে। যোগীদের জন্যে সকালবেল, রোগীদের জন্যে রাত্রি, কাজের লোকের জন্যে দশটা-চারটে । আর সন্ধেবেলাট, সত্যি কথা বলছি, চিরকুমার-সভার অধিবেশনের জন্তে চতুরমুখ স্বজন করেন নি। কী বলেন শ্ৰীশবাবু। শ্ৰীশ। সে কথা মানতে হবে বৈকি। সন্ধ্যা চিরকুমার-সভার অনেক পূর্বেই স্বজন হয়েছে, সে আমাদের সভাপতি চন্দ্রবাবুর নিয়ম মানে না— রসিক। সে যে চন্দ্রের নিয়ম মানে তার নিয়মই আলাদা। আপনার কাছে খুলে বলি, হাসবেন না শ্ৰীশবাবু, আমার এক তলার ঘরে কায়ক্লেশে একটি জানলা দিয়ে অল্প একটু জ্যোৎস্ব আসে ; শুক্লসন্ধ্যায় সেই জ্যোৎস্নার শুভ্র রেখাটি যখন আমার বক্ষের উপর এসে পড়ে তখন মনে হয় কে আমার কাছে কী খবর পাঠালে গো । শুভ্র একটি হংসদূত কোন বিরহিণীর হয়ে এই চিরবিরহীর কানে কানে বলছে— অলিন্দে কালিন্দীকমলমুরভেী কুঞ্জবসতেরবসন্তীং বাসন্তানবপরিমলোদগরচিকুরাং ।