পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবীন \פט র্তার কানে কানে বলে গেলেন, আমরা নতুন চাই নে, আমরা চাই নবীনকে। এর বলেন, মাধবী বছরে বছরে বঁাকা করে খোচা মেরে সাজ বদলায় না, অশোক পলাশ একই পুরাতন রঙে নি:সংকোচে বারে বারে রঙিন। চিরপুরাতনী ধরণী চিরপুরাতন নবীনের দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে রাখমু তবু হিয়া জুড়ন না গেল !” সেই নিত্যনন্দিত সহজশোভন নবীনের উদ্দেশে তোমাদের আত্মনিবেদনের গান শুরু করে দাও । আন গো তোরা কার কী আছে, দেবার হাওয়া বইল দিকে দিগন্তরে— এই স্থসময় ফুরায় পাছে । কুঞ্জবনের অঞ্জলি-যে ছাপিয়ে পড়ে, পলাশকানন ধৈর্য হারায় রঙের ঝড়ে, বেণুর শাখা তালে মাতাল পাতার নাচে । প্রজাপতি রঙ ভাসালে নীলাম্বরে, মৌমাছির ধ্বনি উড়ায় বাতাস-’পরে। দখিন হাওয়া হেঁকে বেড়ায় ‘জাগো জাগো’, দোয়েল কোয়েল গানের বিরাম জানে না গো, রক্তরঙের জাগল প্রলাপ অশোক গাছে ॥ আজ বরবণিনী অশোকমঞ্জরী তার চেলাঞ্চল-আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে রক্তরঙের কিঙ্কিণীঝংকার বিকীর্ণ করে দিলে ; কুঞ্জবনের শিরীষবীথিকায় আজ সৌরভের অপরিমেয় দাক্ষিণ্য। ললিতিকা, আমরাও তো শূন্ত হাতে আসি নি। মাধুর্যের অতল সমুদ্রে আজ দানের জোয়ার লেগেছে, আমরাও ঘাটে ঘাটে দানের বোঝাই তরীর রশি খসিয়ে দিয়েছি। যে নাচের তরঙ্গে তারা ভেসে পড়ল সেই নাচের ছন্দটা, কিশোর, দেখিয়ে দাও । ফাগুন, তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি-যে দান আমার আপনহারা প্রাণ, আমার বঁাধন-ছেড়া প্রাণ ।