পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भांछुिनिएकङन 8-b6. তিনি ষে আমার প্রিয়তম এই কথাটা জানলুম না বলেই এত দুঃখ আমার । তিনি সত্যই প্রিয়তম বলেই যা পাচ্ছি তারই মধ্যে দুঃখ রয়ে যাচ্ছে ; তাতে প্রেম চরিতার্থ হচ্ছে কই । আমরা সব সন্ধানের মধ্যে এককেই খুজছি, এমন কিছুকে খুজছি যা সব বিচ্ছিন্নতাকে জোড়া দেবে। জ্ঞান কি জোড় দিতে পারে । জ্ঞান একটা বস্তুর সঙ্গে অন্য বস্তুকে একবার মিলিয়ে দেখে, একবার বিশ্লেষ করে দেখে । বিরোধটাকে মেটাতে পারে প্রেম, বৈচিত্র্যের সামঞ্জস্য ঘটাতে পারে প্রেম। বৈচিত্র্যের এই মরুভূমির মধ্যে আমাদের তৃষ্ণা কেবলই বেড়ে উঠতে থাকে ; জ্ঞান সেই বৈচিত্র্যের অস্তহীন সূত্রকে টেনে নিয়ে ঘুরিয়ে মারবে— সে তৃষ্ণ মেটাবে কেমন করে। সেই প্রেম না জাগা পর্যন্ত কী ঘোরাটাই ঘুরতে হয়! একবার ভাবি ধনী হই, ধনে বিচ্ছিন্নতা ভরে দেবে, সোনায় রুপোয় সব পূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু, সোনায় রুপোয় সে ফাক কি ভরতে পারে। খ্যাতি-প্রতিপত্তি, মানুষের উপরে প্রভাববিস্তার, কিছু দিয়েই সেই ফাক ভরে না। প্রেমে সব ফাক ভরে যায়, সব বৈচিত্র্য মিলে যায় । মানুষ যে তার সমস্ত চেষ্টার ভিতর দিয়ে কেবলই সেই প্রেমকে খুজে বেড়াচ্ছে— সত্যই যে তার প্রিয়তম । সত্য যদি প্রিয়তম না হবেন তবে তার বিরহে মানুষ কি এমন করে লুটিয়ে পড়ত। যাকে সত্য বলে অঁাকড়ে ধরতে যায় সে যখন শূন্ত হয়ে যায় তখন মাহুষের সেই বেদনার মতো বেদন আর কী আছে। মানুষ তাই একান্তমনে এই কামনাই করছে ; আমার সকল প্রেমের মধ্যে সেই একের প্রেমরস বর্ষিত হোক,আমার সব রন্ধ্র পূর্ণ হয়ে যাক। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধকে পাত্রের মতো করে তার প্রেমের অমৃতে পূর্ণ করে মানুষ পান করতে চায়। অন্তরাত্মার এই কামনা, এই সাধনা, এই ক্ৰন্দন । কিন্তু আহমের কোলাহলে এ কান্না তার নিজের কানেই পেচচ্ছে না। প্রতিবারেই সে মনে করছে, বডড ঠকেছি, অর ঠকা নয়, এবার যা চাচ্ছি তাতেই আমার সব অভাব ভরে যাবে। হায় রে, সে অভাব কি আর-কিছুতে ভরে! এমন মোহান্ধ কেউ নেই যার আত্মা পরম বিরহে এই বলে কাদছে না ‘প্রিয়তম জাগলেন না । ফুলের মালা টাঙানো হয়েছে, বাতি জালানো হয়েছে, সব আয়োজন পূর্ণ, শুধু তাকে ডাকলুম না— তাকে জাগালুম न' | যেখানে তিনি পিতামাতা সেখানে তিনি অন্নপান দিচ্ছেন, প্রাণকে বাচিয়ে রাখছেন। মায়ের ভাণ্ডার তো খোলা রয়েছে ; ধরণীর ভোজে মা পরিবেশন করছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে সব দিচ্ছেন। সেখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু, যখন জগতের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি এত সৌন্দর্য কেন, এত ফুল ফুটল কেন, আকাশে এত তারার প্রদীপ জলল কেন, জীবনে মাঝে মাঝে বসন্তের দক্ষিনে হাওয়া যৌরনের মর্মরধ্বনি