পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি \©¢ግ মহেন্দ্র কহিল, “তোমাকে জোর করিয়া এখানে ধরিয়া রাখিবার অধিকার আমাদের নাই ।” বিনোদিনী হাসিয়া কহিল, “জোর কই করিলে, তাহা তো দেখিলাম না । ভালোবাসিয়া ভালো মুখেই তো থাকিতে বলিলে। তাহাকে কি জোর বলে। বলে তো ভাই চোখের বালি, গায়ের জোর আর ভালোবাসা কি একই হইল।” আশা তাহার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হইয়া কহিল, "কখনোই না ।” বিনোদিনী কহিল, “ঠাকুরপো, তোমার ইচ্ছা আমি থাকি, আমি গেলে তোমার কষ্ট হইবে, সে তো আমার সৌভাগ্য । কী বল ভাই চোখের বালি, সংসারে এমন স্বহৃদ কয় জন পাওয়া যায়। তেমন ব্যথার ব্যথা, স্থথের স্বর্থী, অদৃষ্টগুণে যদিই পাওয়া যায়, তবে আমিই বা তাহাকে ছাড়িয়া যাইবার জন্য ব্যস্ত হইব কেন ।” আশা তাহার স্বামীকে অপদস্থ ভাবে নিরুত্তর থাকিতে দেখিয়া ঈষৎ ব্যথিতচিত্তে কহিল, “তোমার সঙ্গে কথায় কে পরিবে ভাই । . আমার স্বামী তো হার মানিয়াছেন, এখন তুমি একটু থামো ।” মহেন্দ্র আবার দ্রুত ঘর হইতে বাহির হইল। তখন রাজলক্ষ্মীর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করিয়া বিহারী মহেন্দ্রের সন্ধানে আসিতেছিল। মহেন্দ্র তাহাকে স্বারের সম্মুখে দেখিতে পাইয়াই বলিয়া উঠিল, “ভাই বিহারী, আমার মতো পাষণ্ড আর জগতে নাই ।” এমন বেগে কহিল, সে কথা ঘরের মধ্যে গিয়া পৌছিল । ঘরের মধ্য হইতে তৎক্ষণাৎ আহবান আসিল, “বিহারী-ঠাকুরপো ।” বিহারী কহিল, "একটু বাদে আসছি, বিনোদ-বোঠান ।” বিনোদিনী কহিল, "একবার শুনেই যাও-না।” বিহারী ঘরে ঢুকিয়াই মুহূর্তের মধ্যে একবার আশার দিকে চাহিল— ঘোমটার মধ্য হইতে আশার মুখ যতটুকু দেখিতে পাইল, সেখানে বিষাদ বা বেদনার কোনো চিহ্নই তো দেখা গেল না। আশা উঠিয়া যাইবার চেষ্টা করিল, বিনোদিনী তাহাকে জোর করিয়া, ধরিয়া রাখিল— কহিল, ”আচ্ছা, বিহারী-ঠাকুরপো, আমার চোখের বালির সঙ্গে কি তোমার সতিন-সম্পর্ক । তোমাকে দেখলেই ও পালাতে চায় কেন ।” আশা অত্যন্ত লজ্জিত হইয়া বিনোদিনীকে তাড়না করিল। বিহারী হাসিয়া উত্তর করিল, “বিধাতা আমাকে তেমন স্থদুখ করিয়া গড়েন নাই বলিয়া ।” বিনোদিনী । দেখছিস ভাই বালি, বিহারী-ঠাকুরপো বঁাচাইয়া কথা বলিতে জানেন— তোর রুচিকে দোষ না দিয়া বিধাতাকেই দোষ দিলেন । লক্ষ্মণটির মতো