পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७” রবীন্দ্র-রচনাবলী মুক্তদ্বার ; বুক্কুকুর লালসারে করে সে বঞ্চিত ; তাহার মাটির পাত্রে যে অমৃত রয়েছে সঞ্চিত নহে তাহা দীন ভিক্ষু লালায়িত লোলুপের লাগি । ইন্দ্রের ঐশ্বর্য নিয়ে হে ধরিত্রী, আছ তুমি জাগি ত্যাগীরে প্রত্যাশা করি, নির্লোভেরে সঁপিতে সম্মান, দুৰ্গমের পথিকেরে আতিথ্য করিতে তব দান বৈরাগ্যের শুভ্র সিংহাসনে। ক্ষুব্ধ যারা, লুব্ধ যারা, মাংসগন্ধে মুগ্ধ যারা, একান্ত আত্মার দৃষ্টিহার শ্মশানের প্রাস্তচর, আবর্জনাকুগু তব ঘেরি বীভৎস চীৎকারে তারা রাত্রিদিন করে ফেরাফেরি, নির্লজ্জ হিংসায় করে হানাহানি । শুনি তাই আজি মাতুষ-জন্তুর হুহুংকার দিকে দিকে উঠে বাজি । তবু যেন হেসে যাই যেমন হেসেছি বারে বারে পণ্ডিতের মূঢ়তায়, ধনীর দৈন্তের অত্যাচারে, সজ্জিতের রূপের বিদ্রুপে। মানুষের দেবতারে ব্যঙ্গ করে যে অপদেবতা বর্বর মুখবিকারে তারে হাস্য হেনে যাব, বলে যাব, “এ প্রহসনের মধ্য-অঙ্কে অকস্মাৎ হবে লোপ দুষ্ট স্বপনের ; নাট্যের কবর রূপে বাকি শুধু রবে ভস্মরাশি দগ্ধশেষ মশালের, আর অদৃষ্টের অট্টহাসি। বলে যাব, ‘দ্যুতচ্ছলে দানবের মূঢ় অপব্যয় গ্রন্থিতে পারে না কভু ইতিবৃত্তে শাশ্বত অধ্যায়।’ বৃথা বাক্য থাকৃ। তব দেহলিতে শুনি ঘণ্টা বাজে, শেষপ্রহরের ঘণ্টা ; সেই সঙ্গে ক্লাস্ত বক্ষোমাঝে শুনি বিদায়ের দ্বার খুলিবার শব্দ সে অদূরে ধ্বনিতেছে স্বর্যাস্তের রঙে রাঙা পূরবীর স্বরে।