পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী বলেছিল আগুনে ঝলসাবার কথা কিন্তু এ তো কেবলমাত্র উলটে-পালটে তাওয়ায় সেঁক1– তখন কী অনির্বচনীয় আরাম বোধ হবে । ত্রপতি। চন্দরদী, ও কী তুমি বকছ । আজ বিয়ের দিনে কি ও-সব কথা শোভা পায় ! একে তো বাজনা নেই আলো নেই, উলু নেই শাখ নেই, তার পরে যদি আবার অস্তিমকালের বোলচাল দিতে আরম্ভ কর তা হলে তো আর বঁাচিনে । ভূপতি । মিছে না! চন্দরদার ও সমস্ত মুখের আস্ফালন বেশ জানি– এদিকে রাত্তির দশটার পর যদি আর-এক মিনিট ধরে রাখা যায়, তা হলে ব্রাহ্মণ বিরহের জালায় একেবারে অস্থির হয়ে পড়ে— চন্দ্রকান্ত । ভূপতির আর কোনো গুণ না থাক ও মানুষ চেনে তা স্বীকার করতে হয়। ঘড়িতে ওই যে ছু চোলো মিনিটের কাটা দেখছ উনি যে কেবল কানের কাছে টিক টিক করে সময় নির্দেশ করেন তা নয় অনেক সময় প্যাট প্যাট করে বেঁধেন— মন-মাতঙ্গকে অস্কুশের মতো গৃহাভিমুখে তাড়না করেন । রাত্তির দশটার পর আমি যদি বাইরে থাকি তা হলে প্রতি মিনিট আমাকে একটি করে খোচা মেরে মনে করিয়ে দেন ঘরে আমার অন্ন ঠাণ্ডা এবং গৃহিণী গরম হচ্ছেন — বিহুদার ঘড়ির সঙ্গে আজকাল কোনো সম্পর্কই নেই— এবার থেকে ঘড়ির ওই চন্দ্ৰবদনে নানা রকম ভাব দেখতে পাবেন– কখনো প্রসন্ন কখনো ভীষণ । ( নিমাইয়ের প্রতি ) আচ্ছা ভাই বৈজ্ঞানিক, তুমি আজ আমন চুপচাপ কেন ? এমন করলে তো চলবে না। ’ ত্রিপতি । সত্যি, বিমু যে বিয়ে করতে যাচ্ছে তা মনে হচ্ছে না । আমরা কতকগুলো পুরুষমামুষে জটলা করেছি— কী করতে হবে কেউ কিছু জানিনে— মহা মুশকিল । চন্দরদী, তুমি তো বিয়ে করেছ, বলো না কী করতে হবে— ই করে সবাই মিলে বসে থাকলে কি বিয়ে-বিয়ে মনে হয় ? চন্দ্রকান্ত । আমার বিয়ে সে যে পুরাতত্ত্বের কথা হল— আমার স্মরণশক্তি ততদূর নেীয়ে না। কেবল বিবাহের যেটি সর্বপ্রধান আয়োজন, যেটিকে কিছুতে ভোলবার জো নেই, সেইটিই অস্তরে বাহিরে জেগে আছে, মস্তর-তন্তর পুরুত-ভাট সে সমস্ত ভুলে গেছি। ভূপতি। বাসরঘরে খালীর কানমলা ? চন্দ্রকান্ত । হায় পোড়াকপাল! শুালীই নেই তো শু্যালীর কানমলা— মাথা নেই তার মাথাব্যথা । খালী থাকলে তবু তো বিবাহের সংকীর্ণতা অনেকটা দূর হয়ে যায়— ওরই মধ্যে একটুখানি নিশ্বেস ফেলবার, পাশ ফেরবার জায়গা পাওয়া যায়— শ্বশুরমশায় একেবারে কড়ায় গণ্ডায় ওজন করে দিয়েছেন সিকিপয়সার ফাউ দেননি ।