পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86२ রবীন্দ্র-রচনাবলী অবস্থাতেই একেবারে লুপ্ত হইয়া গেল। সে প্রথমে গোলমালে বিত্রত ও অবাক হইয়া বিৰন ঠাকুরের মুখের দিকে সজল চক্ষু তুলিয়া চাহিয়া রহিল। তার পরে তার হাতমুখ-নাড়া দেখিয়া তাহার অত্যন্ত কৌতুক বোধ হইল । ية সে ভারি খুশি হইয়া বলিল, “আবার বলে ।” f পুরোহিত আবার বকিয়া গেলেন। ধ্রুব অত্যন্ত হাসিতে হাসিতে বলিল, “আবার বলে ।” রাজা ধ্রুবের অশ্রুসিক্ত কপোলে এবং হাসিভর অধরে বার বার চুম্বন করিলেন । তখন রাজ রাজপুরোহিত ও দুটি ছেলেমেয়ে মিলিয়া খেলা পড়িয়া গেল । বিখন ঠাকুর রাজাকে কহিলেন, “মহারাজ ইহাদের লইয়া বেশ আছেন । দিনরাত প্রখর বুদ্ধিমানের সঙ্গে থাকিলে বুদ্ধি লোপ পায়। ছুরিতে অবিশ্রাম শান পড়িলে ছুরি ক্রমেই সূক্ষ্ম হইয়া অস্তধান করে। একটা মোট বাট কেবল অবশিষ্ট থাকে।” রাজা হাসিয়া কহিলেন, "এগনে তবে বোধ করি আমার সূক্ষ্ম বুদ্ধির লক্ষণ প্রকাশ পায় নাই ।” বিৰন । না। স্বল্প বুদ্ধির একটা লক্ষণ এই যে, তাহা সহজ জিনিসকে শক্ত করিয়া তুলে। পৃথিবীতে বিস্তর বুদ্ধিমান না থাকিলে পৃথিবীর কাজ অনেকটা সোজা হইত। নানারূপ স্ববিধা করিতে গিয়াই নানারূপ অসুবিধা ঘটে। অধিক বুদ্ধি লইয়া মানুষ কী করিবে ভাবিয়া পায় না।” রাজা কহিলেন, “পাচটা আঙলেই বেশ কাজ চলিয়া যায়—দুর্ভাগ্যক্রমে সাতটা জাঙল পাইলে ইচ্ছা করিয়া কাজ বাড়াইতে হয়।” রাজা ধ্রুবকে ডাকিলেন । ধ্রুব তাহার সঙ্গিনীর সহিত পুনরায় শাস্তি স্থাপন করিয়া খেলা করিতেছিল । রাজার ডাক শুনিয়া তৎক্ষণাং খেলা ছাড়িয়া রাজার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল । রাজা তাহাকে সম্মুখে বসাইয়া কছিলেন, “ঞ্জব, সেই নূতন গানটি ঠাকুরকে শোনাও।” কিন্তু ধ্রুব নিতান্ত আপত্তির ভাবে ঠাকুরের মুখের দিকে চাছিল। রাজা লোভ দেখাইয়া বলিলেন, “তোমাকে টকটক চড়তে দেব।” ধ্রুব তার আধো-আধো উচ্চারণে বলিতে লাগিল, ( আমায় ) ছ-জনায় মিলে পথ দেখায় বলে পদে পদে পথ জুলি হে। নানা কথার ছলে নানান মুনি বলে সংশয়ে তাই তুলি হে ।