পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

4లీన রবীন্দ্র-রচনাবলী আমরাও কি তেমনি একই ? গবর্মেন্টের শক্তির প্রতিষ্ঠা যেখানে আমাদেরও শক্তির প্রতিষ্ঠা কি সেইখানে ? তাহার যে-ডাল নাড়া দিলে ষে-ফল পড়ে আমরাও কি সেই ভালটা নাড়িলেই সেই ফল পাইব ? উত্তর দিবার সময় পুথি খুলিয়ে না ; এ-সম্বন্ধে মিল কী বলিয়াছেন, স্পেনসর কী বলিয়াছেন, সৗলি কী বলিয়াছেন, তাহা জানিয়া আমার সিকি পয়সার লাভ নাই। প্রত্যক্ষ শাস্ত্র সমস্ত দেশ ব্যাপ্ত করিয়া খোলা রহিয়াছে। খুব বেশিদূর তলাইবার দরকার নাই, নিজের মনের মধ্যেই একবার দৃষ্টিপাত করে না। যখন য়ুনিভার্সিটি-বিল লইয়া আমাদের মধ্যে একটা আন্দোলন উঠিয়াছিল, তখন আমরা কিরূপ সন্দেহ করিয়াছিলাম। আমরা সন্দেহ করিয়াছিলাম যে, গবমেণ্ট আমাদের বিদ্যার উন্নতিকে বাধা দিবার চেষ্টা করিতেছেন । কেন এরূপ করিতেছেন। কারণ, লেখাপড়া শিথিয়া আমরা শাসন সম্বন্ধে অসন্তোষ অনুভব করিতে এবং প্রকাশ করিতে শিথিয়াছি । মনেই করো, আমাদের এ সন্দেহ ভুল, কিন্তু তবু ইহা জন্মিয়াছিল, তাহাতে ভুল নাই । যে-দেশে পার্লামেণ্ট আছে সে-দেশেও এডুকেশন-বিল লইয়া ঘোরতর বাদবিবাদ চলিয়াছিল— কিন্তু দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে কি কোনো লোক স্বপ্নেও এমন সন্দেহ করিতে পারিত যে, যেহেতু শিক্ষালাভের একটা অনিবার্ধ ফল এই যে, ইহার দ্বারা লোকের আশা-আকাঙ্ক্ষা সংকীর্ণতা পরিহার করে, নিজের শক্তি সম্বন্ধে তাহার মন সচেতন হইয়া ওঠে এবং সেই শক্তি প্রয়োগ করিবার ক্ষেত্র বিস্তার করিতে সে ব্যগ্র হয়, অতএব এতবড়ো বালাইকে প্রশ্ৰয় না দেওয়াই ভালো । কখনোই নহে, উভয় পক্ষই এই কথা মনে করিয়াছিল যে, দেশের মঙ্গলসাধন সম্বন্ধে পরস্পর ভ্রমে পড়িয়াছে । ভ্রমসংশোধন করিয়া দিবা মাত্র তাহার ফল হাতে হাতে, অতএব সেখানে তর্ক করা এবং কার্য করা একই । আমাদের দেশে সে-কথা খাটে না । কারণ, কর্তার ইচ্ছা কর্ম, এবং আমরা কতা নহি । তার্কিক বলিয়া থাকেন, “সে কী কথা । আমরা যে বহুকোটি টাকা সরকারকে দিয়া থাকি, এই টাকার উপরেই ষে সরকারের নির্ভর ; আমাদের কতৃত্ব থাকিবে না কেন । আমরা এই টাকার হিসাব তলব করিব।” গোরু ষে নন্দনন্দনকে দুই বেলা দুধ দেয়, সেই দুধ খাইয়া নন্দনন্দন যে বেশ পরিপুষ্ট হইয়া উঠিয়াছেন, গোরু কেন শিং নাড়িয়া নন্দনন্দনের কাছ হইতে দুধের হিসাব তলব না করে ! কেন যে না করে, তাহ গোরুর অন্তরাত্মাই জানে এবং তাহার অন্তর্ধামাই জানেন । সাদা কথা এই মে, অৰস্থাভেদে উপায়ের বিভিন্নতা ঘটিয়া থাকে। মনে করে না কেন, ফরাসি রাষ্ট্রের নিকট হইতে ইংরেজ যদি কোনো স্থবিধা আদায়ের মতলব করে,