পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 8 ہ و \ চরম ধর্ষ জানে, সেজন্ত ভারতবাসীকে যদি অস্ত্রত্যাগ করিয়া এই পৃথিবীতলে চিরদিনের মতে নিজীব নিঃসহায় পৌরুষবিহীন হইতে হয়, তবে সে-পক্ষে তাহাজের কোনো দয়া মায়া নাই । অ্যাংলোস্তাক্সন যে শক্তিকে সকলের চেয়ে পূজা করে, ভারতবর্ষ হইতে সেই শক্তিকে প্রত্যহ সে অপহরণ করিয়া এ-দেশকে উত্তরোত্তর নিজের কাছে অধিকতর হেয় করিয়া তুলিতেছে, আমাদিগকে ভীরু বলিয়া অবজ্ঞা করিতেছে– অথচ একবার চিন্তা করিয়া দেখে না, এই ভীরুতাকে জন্ম দিয়া তাহাদের দলবদ্ধ ভীরুতা পশ্চাতে দাড়াইয়া আছে । অতএব অনেক দিন হইতে ইহা দেখা যাইতেছে যে, অ্যাংলোস্যাকসন মহিমাকে সম্পূর্ণ নিরুপদ্রব করিবার পক্ষে দূরতম ব্যাঘাতটি যদি আমাদের দেশের পক্ষে মহত্তম দ্বমূল্য বস্তুও হয়, তবে তাহাকে দলিয়া সমভূম করিয়া দিতে ইহার বিচারমাত্র করে না । এই সত্যটি ক্রমে ক্রমে ভিতরে ভিতরে আমাদের কাছেও স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে বলিয়াই আজ গবর্মেন্টের প্রত্যেক নড়াচড়ায় আমাদের হৃৎকম্প উপস্থিত হইতেছে, তাহারা মুখের কথায় যতই আশ্বাস দিতেছেন আমাদের সন্দেহ ততই বাড়িয়া উঠিতেছে । কিন্তু আমাদের পক্ষে অদ্ভূত ব্যাপার এই যে, আমাদের সন্দেহেরও অস্ত নাই, আমাদের নির্ভরেরও সীমা নাই । বিশ্বাসও করিব না, প্রার্থনাও করিব । যদি জিজ্ঞাসা করা যায় এমন করিয়া সময় নষ্ট করিতেছ কেন, তবে উত্তর পাইবে, এক দলের দয়া না যদি হয় তো আর-এক দলের দয়া হইতে পারে। প্রাতঃকালে যদি অনুগ্রহ না পাওয়া যায় তো, ষথেষ্ট অপেক্ষা করিয়া বসিয়া থাকিলে সন্ধ্যাকালে অনুগ্রহ পাওয়া যাইতে পারে। রাজা তো আমাদের একটি নয়, এইজন্য বারবার সহস্রবার তাড়া খাইলেও আমাদের আশা কোনোক্রমেই মরিতে চায় না— এমনি আমাদের भूeकिल छ्हेग्नां८छ् । কথাটা ঠিক। আমাদের একজন রাজা নহে। পৃথিবীর ইতিহাসে ভারতবর্ষের ভাগ্যে একটা অপূর্ব ব্যাপার ঘটিয়াছে। একটি বিদেশী জাতি আমাদের উপরে রাজত্ব করিতেছে, একজন বিদেশী রাজা নহে । একটি দূরবর্তী সমগ্র জাতির কতৃৰ্ত্তভার আমাদিগকে বহন করিতে হইতেছে । ভিক্ষাবৃত্তির পক্ষে এই অবস্থাটাই কি এত অনুকুল । প্রবাদ আছে যে, ভাগের মা গঙ্গা পায় না, ভাগের কুপোন্তই কি মাছের মুড়ে এবং জুধের সর পায় ।