পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি SDoS বিনোদিনী সেই চিঠিখানা লইয়া ঘরে ঢুকিল । ভিতর হইতে দ্বার বন্ধ করিয়া বিছানার উপর বসিয়া পড়িতে লাগিল । _ চিঠির মধ্যে বিনোদিনী কী রস পাইল, তাহা বিনোদিনীই জানে। কিন্তু তাহা কৌতুকরস নহে। বার বার করিয়া পড়িতে পড়িভে তাহার দুই চক্ষু মধ্যাহ্নের বালুকার মতো জলিতে লাগিল, তাহার নিশ্বাস মরুভূমির বাতাসের মতো উত্তপ্ত ट्झेब्रां ॐठिल । মহেন্দ্র কেমন, আশা কেমন, মহেন্দ্র-আশার প্রণয় কেমন, ইহাই তাহার মনের মধ্যে কেবলই পাক খাইতে লাগিল । চিঠিখানা কোলের উপর চাপিয়া ধরিয়া পা ছড়াইয়া দেয়ালের উপর হেলান দিয়া অনেকক্ষণ সম্মুখে চাহিয়া বসিয়া রহিল । মহেঞ্জের সে-চিঠি বিহারী আর খুজিয়া পাইল না। সেইদিন মধ্যাহ্নে হঠাৎ অন্নপূর্ণ আসিয়া উপস্থিত । দুঃসংবাদের আশঙ্কা করিয়া রাজলক্ষ্মীর বুকটা হঠাৎ কঁাপিয়া উঠিল— কোনো প্রশ্ন করিতে তিনি সাহস করিলেন না, অন্নপূর্ণার দিকে পাংশুবর্ণ মুখে চাহিয়া রহিলেন । অন্নপূর্ণ কহিলেন, “দিদি, কলিকাতার খবর সব ভালো।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “তবে তুমি এখানে ষে।” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “দিদি, তোমার ঘরকন্নার ভার তুমি লও'সে । আমার আর সংসারে মন নাই । আমি কাশী যাইব বলিয়া যাত্রা করিয়া বাহির হইয়াছি। তাই তোমাকে প্রণাম করিতে আসিলাম । জ্ঞানে অজ্ঞানে অনেক অপরাধ করিয়াছি, মাপ করিয়ো । আর তোমার বউ, ( বলিতে বলিতে চোখ ভরিয়া উঠিয়া জল পড়িতে লাগিল ) সে ছেলেমানুষ, তার মা নাই, সে দোষী হোক নির্দেশষ হোক সে তোমার ।” আর বলিতে পারিলেন না । রাজলক্ষ্মী ব্যস্ত হইয়া তাহার স্নানাহারের ব্যবস্থা করিতে গেলেন । বিহারী খবর পাইয়া গদাই ঘোষের চণ্ডীমণ্ডপ হইতে ছুটিয়া আসিল । অন্নপূর্ণাকে প্রণাম করিয়া কহিল, “কাকীমা, সে কি হয় ? আমাদের তুমি নির্মম হইয়া ফেলিয়া যাইবে ?” অন্নপূর্ণ অশ্রু দমন করিয়া কহিলেন, “আমাকে আর ফিরাইবার চেষ্টা করিসনে, বেহারি— তোরা সব স্বখে থাক, আমার জন্যে কিছুই আটকাইবে না।” বিহারী কিছুক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। তারপরে কহিল, “মহেঞ্জের ভাগ্য মন্দ, তোমাকে সে বিদায় করিয়া দিল ।” অন্নপূর্ণ চকিত হইয়া কছিলেন, “অমন কথা বলিসনে। আমি মহিনের উপর কিছুই রাগ করি নাই। আমি না গেলে সংসারের মঙ্গল হইবে না।” \9-8 e