পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b* • ஆ' রবীশ্র-রচনাবলী অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কছিলেন, “একবার মহিনকে ডাকিয়া জানিবি না, বেহারি ? অার তো দেরি করা উচিত হয় না।” বিহারী কিছুক্ষণ নিরুত্তরে থাকিয়া কহিল, “তুমি যেমন আদেশ করিবে আমি তাহাই করিব । তাহার ঠিকানা কেহ কি জানে।” অন্নপূর্ণ । ঠিক জানে না, খুজিয়া লইতে হইবে । বিহারী, আর-একটা কথা তোর কাছে বলি। আশার মুখের দিকে চাস । বিনোদিনীর হাত হইতে মহেন্দ্রকে যদি উদ্ধার করিতে না পারিস তবে সে আর বঁাচিবে না । তাহার মুখ দেখিলেই বুঝিতে পারিবি, তার বুকে মৃত্যুবাণ বাজিয়াছে । বিহারী মনে মনে তীব্র হাসি হাসিয়া ভাবিল, “পরকে উদ্ধার আমি করিতে যাইব— ভগবান, আমার উদ্ধার কে করিবে ।” কহিল, “বিনোদিনীর আকর্ষণ হইতে চিরকালের জন্য মহেন্দ্রকে ঠেকাইয়া রাখিতে পারিব, এমন মন্ত্র আমি কি জানি, কাকীমা ? মার ব্যামোতে সে দু-দিন শাস্ত হইয়া থাকিতে পারে, কিন্তু আবার সে যে ফিরিবে না, তাহা কেমন করিয়া বলিব ।” এমন সময় মলিনবসনা আশা মাথায় আধখানা ঘোমটা দিয়া ধীরে ধীরে তাহার মাসিমার পায়ের কাছে আসিয়া বসিল । সে জানিত রাজলক্ষ্মীর পীড়া সম্বন্ধে বিহারীর সঙ্গে অন্নপূর্ণার আলোচনা চলিতেছে, তাই ঔৎস্থক্যের সহিত শুনিতে আসিল । পতিব্ৰতা আশার মুখে নিস্তন্ধ দুঃখের নীরব মহিমা দেখিয়া বিহারীর মনে এক অপূর্ব ভক্তির সঞ্চার হইল। শোকের তপ্ত তীর্থ জলে অভিষিক্ত হইয়া এই তরুণী রমণী প্রাচীন যুগের দেবীদের ন্যায় একটি অচঞ্চল মর্যাদা লাভ করিয়াছে— সে এখন আর সামান্তা নারী নহে, সে যেন দারুণ দুঃখে পুরাণবণিতা সাধবীদের সমান বয়স প্রাপ্ত হইয়াছে। বিহারী অাশার সহিত রাজলক্ষ্মীর পথ্য ও ঔষধ সম্বন্ধে আলোচনা করিয়া যখন আশাকে বিদায় করিল, তখন একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া অন্নপূর্ণাকে কহিল, “মহেক্সকে আমি উদ্ধার করিব।” বিহারী মহেঞ্জের ব্যাঙ্কে গিয়া খবর পাইল যে, তাহদের এলাহাবাদ-শাখার সহিত মহেন্দ্র অল্পদিন হইতে লেনাদেনা আরম্ভ করিয়াছে । 8S স্টেশনে আসিয়া বিনোদিনী একেবারে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে মেয়েদের গাড়িতে চড়িয়া বসিল । মহেন্দ্ৰ কহিল, “ও কী কর, আমি তোমার জন্যে সেকেও ক্লাসের ििक किनिळउहि ।” বিনোদিনী কহিল, “দরকার কা, এখানে আমি বেশ থাকিব।"