পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শব্দতত্ত্ব ○ケ○ হলন্ত হয় না। কথাটা সম্পূর্ণ প্রামাণিক নহে, কিন্তু মোটের উপর বলা যায়, খাস বাংলার অধিকাংশ দুই অক্ষরের বিশেষণ হলন্ত নহে। বাংলা-উচ্চারণের সাধারণ নিয়মমতে ভাল শব্দ ভাল হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু আমুর অকারাস্ত উচ্চারণ করি। ১ বস্তুত বাংলায় অকারান্ত বিশেষ্য শব্দ অতি অল্পই দেখা যায়, অধিকাংশই বিশেষণ ; যথা; বড় ছোট মাঝ ( মাঝে মেঝো ) ভাল কাল খাট ( ক্ষুদ্র ) জড় (পুঞ্জীকৃত ) ইত্যাদি। বাকি অনেকগুলা বিশেষণই অণকারাস্ত ; যথা, কঁচা পাকা বঁকা তেড়া সোজা সিধা সাদা মোট চুল বোবা কালা ন্যাড়। কানা তিতা মিঠা উচা বোকা ইত্যাদি। অী প্রত্যয় পূর্বোক্ত আকারান্ত বিশেষণগুলিকে আ প্রত্যয়যোগে নিম্পন্ন বলিয়া অনুমান করিতেছি । সংস্কৃত শব্দ কাণ, বাংলায় বিশেষণ হইবার সময় কানা হইল, মৃত হইতে মড়া হইল, মহৎ হইতে মোট হইল, সিত হইতে সাদা হইল। এই আকারগুলি উচ্চারণের নিয়মে আপনি আসে নাই। বিশেষণে হলন্ত প্রয়োগ বর্জন করিবার একটা চেষ্টা বাংলায় আছে বলিয়াই যেখানে সহজে অন্য কোনো স্বরবর্ণ জোটাইতে পারে নাই, সেই-সকল স্থলে আ প্রত্যয় যোগ করিয়াছে। সংস্কৃত ভাষার স্বার্থে কী বাংলায় অা প্রত্যয়ের আকার ধারণ করিয়াছে। ঘোটক ঘোড়া, মস্তক মাথা, পিষ্টক পিঠা, কণ্টক র্কাটা, চিপিটক চিড়া, গোপালক গোয়ালা, কুল্যক কুলা । বাংলায় অনেক শব্দ আছে যাহা কখনো বা স্বার্থে আ প্রত্যয় গ্রহণ করিয়াছে, কখনো করে নাই ; যেমন তক্ত তক্তা, বাঘ বাঘ, পাট পাট, ল্যাজ ল্যাজা, চোঙ চোঙা, চাদ চাদ, পাত পাতা, ভাই ভাইয়া (ভায়া ), বাপ বাপা, থাল থালা, কালে৷ কালা, তল তলা, ছাগল ছাগল, বাদল বাদলা, পাগল পাগল, বামন বামন, বেল (ফুল) বেলা, ইলিশ ইলশা (ইলশে )। এই অ৷ প্রত্যয়যোগে অনেকস্থলে অবজ্ঞা বা অতিপরিচয় জ্ঞাপন করে, বিশেষত মানুষের নাম সম্বন্ধে ; যথা, রাম রাম, শাম শামা, হরি হরে (হরিয়া), মধু মোধে। (মধুয়া ) ফটিক ফটুকে ( ফট্‌কিয় )। I দ্রষ্টব্য এই যে, সকল নামে আ প্রত্যয় হয় না ; যাদবকে যাদবা, মাধবকে মাধব। ১ বাংলা অ অনেকস্থলেই হ্রস্ব ওকারের স্তায় উচ্চারিত হয়। আমরা লিখি যত, উচ্চারণ করি যতে লিখি বড় উচ্চারণ করি বড়ো। উড়িয়ার বড় বাঙালির বড়-র সহিত তুলনা করিলে দুই অকারের প্রভেদ বুঝা যাইবে ।