পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালঞ্চ ১৮১ “ভাবনা নিয়ে তো পিছনের দিকে যাওয়া যায় না। দুজনে যখন জীবন আরম্ভ করেছিলেম মেসোমশায়ের কোলের কাছে, সে তো না ভেবে চিন্তে । আজি কোনো রকমের নিডুনি দিয়ে কি উপড়ে ফেলতে পারবে সেই আমাদের দিনগুলিকে । তোমার কথা বলতে পারি নে সরি, আমার তো সাধ্য নেই।” “পায়ে পড়ি, দুর্বল কোরো না আমাকে । দুর্গম কোরো না উদ্ধারের পথ ।” আদিত্য সরলার দুই হাত চেপে ধরে বললে, “উদ্ধারের পথ নেই, সে পথ আমি রাখব না। ভালোবাসি তোমাকে, এ কথা আজ এত সহজ করে সত্য করে বলতে পারছি এতে আমার বুক ভরে উঠেছে। তেইশ বছর যা ছিল কুঁড়িতে, আজ দৈবের কৃপায় তা ফুটে উঠেছে। আমি বলছি, তাকে চাপা দিতে গেলে সে হবে ভীরুতা, সে হবে অধৰ্ম ।” “চুপ চুপ, আর বোলো না। আজকের রাত্তিরের মতো মাপ করে, মাপ করে। অামাকে ।” "সরি, আমিই রুপাপাত্র, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমিই তোমার ক্ষমার যোগ্য। কেন আমি ছিলুম অন্ধ। কেন আমি তোমাকে চিনলুম না, কেন বিয়ে করতে গেলুম ভুল করে। তুমি তো কর নি, কত পাত্র এসেছিল তোমাকে কামনা করে, সে তে৷ অামি জানি ।” "জেঠামশায় যে আমাকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন তার বাগানের কাজে, নইলে হয়তো—” “না না— তোমার মনের গভীরে ছিল তোমার সত্য উজ্জল । না জেনেও তার কাছে তুমি বাধা রেখেছিলে নিজেকে। আমাকে কেন তুমি চেতন করে দাও নি। আমাদের পথ কেন হল আলাদা ।” “থাক্ থাক, যাকে মেনে নিতেই হবে তাকে না মানবার জন্য ঝগড়া করছ কার সঙ্গে। কী হবে মিথ্যে ছটফট করে । কাল দিনের বেলায় যা হয় একটা উপায় স্থির করা যাবে।” 响 g “আচ্ছ, চুপ করলুম। কিন্তু এমন জ্যোৎস্নারাত্রে আমার হয়ে কথা কইবে এমন কিছু রেখে যাব তোমার কাছে।” বাগানে কাজ করবার জন্য আদিত্যের কোমরে একটা ঝুলি থাকে বাধা, কিছু না কিছু সংগ্রহ করবার দরকার হয়। সেই বুলি থেকে বের করলে ছোটো তোড়ায় বাধা পাচটি নাগকেশরের ফুল। বললে, “আমি জানি নাগকেশর তুমি ভালোবাস। তোমার কাধের ওই আঁচলের উপর পরিয়ে দেব ? এই এনেছি সেফটিপিন।” > R|>\○ § *.