পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ 6. So রবীন্দ্র-রচনাবলী ૨ বর্তমানসংখ্যক ‘ভারতী’তে “ঐতিহাসিক যৎকিঞ্চিৎ’ নামক ক্ষুদ্র প্রবন্ধটি যিনি লিথিয়াছেন, তিনি আধুনিক বাঙালি ইতিহাস-লেখকগণের শীর্ষস্থানীয়। র্তাহার প্রস্তাবটির প্রতি পাঠকগণ মনোযোগ করিবেন। ইতিহাসের সত্য মিথ্যা নির্ণয় করা বড়ো কঠিন । কথা সজীব পদার্থের মতে বাড়িয়া চলে ; মুখে মুখে কালে কালে তাহার পরিবর্তন ঘটিতে থাকে। স্বজনশক্তি মানুষের মনের স্বাভাবিক শক্তি— যে-কোনো ঘটনা, যে-কোনো কথা তাহার হস্তগত হয় তাহাকে সে অবিকৃত রাখিতে পারে না, কতকটা নিজের ছাচে ঢালিয়া তাহাকে গড়িয়া লয়। এইজন্ত আমরা প্রত্যহই একটি ঘটনার নানা পাঠান্তর নানা লোকের নিকট পাইয়া থাকি । কেহ কেহ এইরূপ প্রাত্যহিক ঘটনার দৃষ্টান্ত দেখাইয়া ইতিহাসের সত্যতা সম্বন্ধে আগাগোড়া সন্দেহ প্রকাশ করেন। কিন্তু একটি কথা তাহারা ভুলিয়া যান, ঐতিহাসিক ঘটনার জনশ্রুতি বহুতর লোকের মন হইতে প্রতিফলিত হইয়া আসে এবং সেই ঘটনার বিবরণে সাময়িক লোকের মনের ছাপ পড়িয়া যায়। তাহা হইতে ঘটনার বিশুদ্ধ সত্যতা আমরা না পাইতেও পারি কিন্তু তৎসাময়িক অনেক লোকের মনে তাহ কিরূপ প্রতিভাত হইয়াছিল সেটা পাওয়া যাইতে পারে। অতীত সময়ের অবস্থা কেবল ঘটনার দ্বারা নির্ণয় হয় না, লোকের কাছে তাহ কিরূপ ঠেকিয়াছিল সেও একটা প্রধান দ্রষ্টব্য বিষয় । অতএব ঐতিহাসিক ঘটনার জনশ্রুতিতে বাস্তব ঘটনার সহিত মানবমন মিশ্রিত হইয়া যে-পদার্থ উদ্ভূত হয় তাহাই ঐতিহাসিক সত্য। সেই সত্যের বিবরণই মানবের নিকট চিরন্তন কৌতুকাবহ এবং শিক্ষার বিষয় । এই বিচিত্র জনশ্রুতি এবং জীর্ণ-উপকরণমূলক ইতিহাসে এমন অনেকটা অংশই থাকে যাহার প্রমাণ অপ্রমাণ ঐতিহাসিকের ব্যক্তিগত প্রকৃতির উপর নির্ভর করে । দুই সাক্ষীর মধ্যে কোন সাক্ষীকে বিশ্বাস করিব তাহা অনেক সময়ে কেবলমাত্র বিচারকের স্বভাব ও পূর্বসংস্কারের দ্বারা স্থিরীকৃত হয়। ইংরেজ মিথ্যা বলে না, ইংরেজ জজ ইহা কতকটা স্বভাবত এবং কতকটা টানিয়াও বিশ্বাস করেন ; এই প্রবৃত্তি ও বিশ্বাস -বশত তাহারা অন্তদেশীয়দের প্রতি অনেক সময়ে অবিচার করিয়া থাকেন, তাহা ইংরেজ ব্যতীত আর-সকলেই অনুভব করিতে পারেন। ১ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়