পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 8 গ্রহণ করেন নাই ; তবে শাস্ত্রের অনভিমতে সম্মার্জনীপ্রয়োগ প্রভৃতির উল্লেখ এখানে আমি করিতে চাহি না । যাহা হউক আমার এবং বোধ করি সাধারণের বিশ্বাস এই যে, হিন্দু স্ত্রী কোনোকালে হিন্দু স্বামীর দেবতা ছিলেন না। অতএব এ স্থলে হিন্দুশাস্ত্রের সহিত কিঞ্চিৎ বলপূর্বক কোম্শাস্ত্রের অসবর্ণ মিলন সংঘটন করা হইয়াছে। বিবাহবিশেষ আলোচনায় তৃতীয় দ্রষ্টব্য এই যে, স্বামীস্ট্রীর দাম্পত্যবন্ধন কিরূপ ঘনিষ্ঠ । চন্দ্রনাথবাবু বলেন, হিন্দুবিবাহে ষেরূপ একীকরণ দেখা যায় এরূপ অন্ত কোনো জাতির বিবাহে দেখা যায় না। এ সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ বক্তব্য আছে । এক স্বামী ও এক স্ত্রীর একীকরণ বিবাহের উচ্চতম অাদর্শ। সে-অাদর্শ আমাদের দেশে যদি জাজ্বল্যমান থাকিত তবে এ দেশে বহু বিবাহ কিরূপে সম্ভব হইত। মহাভারত পাঠে জানা যায় শ্রীকৃষ্ণের ষোড়শসহস্র মহিষী ছিল । তখনকার অন্তান্ত রাজপরিবারেও বহুবিবাহদৃষ্টাস্তের অসদ্ভাব ছিল না। ব্রাহ্মণ ঋষিদিগেরও একাধিক পত্নী দেখা যাইত। অন্ত ঋষির কথা দূরে যাউক, বশিষ্ঠের দৃষ্টান্ত দেখো । অরুন্ধতীই যে র্তাহার একমাত্র স্ত্রী তাহা নহে, অক্ষমালা নামে এক অধম জাতীয়া নারী তাহার অপর স্ত্রী ছিলেন । এরূপ ব্যবস্থাকে দ্যায্যমতে একীকরণ বলা উচিত হয় না ; ইহাকে পঞ্চীকরণ, ষড়ীকরণ, সহস্রীকরণ বলিলেও দোষ নাই। কেহ কেহ বলিবেন, স্ত্রী যতগুলিই থাক না কেন, সকলগুলিই স্বামীর সহিত মিশিয়া একেবারে এক হইয়া যাইবে, ইহাই হিন্দুবিবাহের গৌরব । স্ত্রী যত অধিক হয় বিবাহের গৌরবও বোধ করি তত অধিক, কারণ একীকরণ ততই গুরুতর। কিন্তু একীকরণ বলিতে বোধ করি এই বুঝায় যে, প্রেমবিনিময়বশত স্বামীস্ট্রীর হৃদয়মনের সর্বাঙ্গীণ ঐক্য ; এবং এরূপ ঐক্য যে দাম্পত্যবন্ধনের পবিত্র আদর্শ তাহ কেহই অস্বীকার করিতে পারে না। কিন্তু প্রেমপ্রভাবে হৃদয়ের ঐক্য যেখানে মুখ্য আদর্শ সেখানে বহুদারপরিগ্রহ সম্ভব হইতে পারে না । স্ত্রী ও পুরুষের পরিপূর্ণ মিলন যদি হিন্দুবিবাহের যথার্থ প্রাণ হইত তবে এ দেশে কৌলিন্ত বিবাহ কোনোমতে স্থান পাইত না । বিবাহের ষত কিছু আদর্শের উচ্চতা সে কেবলমাত্র পত্নীর বেলায়, পতিকে সে-আদর্শ স্পর্শ করিতেছে না। কিন্তু ইহা কে অস্বীকার করিতে পারেন যে, বিবাহ পতি পত্নী উভয়ে মিলিয়া হয় । এ সম্বন্ধে শ্রদ্ধাস্পদ শ্ৰীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার আশ্চর্য উত্তর দিয়াছেন । হিন্দু বিধবার স্তায় বিপত্নীক পুরুষও যে কেন নিষ্কাম ধর্ম অবলম্বন করেন না, তৎসম্বন্ধে তিনি বলেন : হিন্দু সাম্যবাদ মানেন না , হিন্দু মানেন অমুপাতবাদ । ক খ যখন সমান নহে তখন তাহার সমান আসন পাইবেও না ; ক যেমন তেমনই ক পাইবে, খ যেমন তেমনই থ পাইবে । ক খ মধ্যে যেরূপ সম্বন্ধ, ক-র ও খ-র স্বত্বাধিকার মধ্যে সেইরূপ অনুপাত হইবে। হিন্দু এই অনুপাতবাদী। হিন্দু স্ত্রীপুরুষের সাম্য স্বীকার করে না ; কাজেই হিন্দু স্ত্রী পুরুষ মধ্যে অবস্থার সাম্য ব্যবস্থা করে না । めミ欄&b