পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ S8 রবীন্দ্র-রচনাবলী যদি লিখিত বাংলাকে ‘সংস্কৃত বাংলা’ ও কথিত বাংলাকে ‘প্রাকৃত বাংলা’ বলা যায়, তাহা হইলে আমরা আপত্তি করিতে পারি না । কিন্তু সংস্কৃতভাষা ও প্রাকৃতভাষা অন্তরূপ। প্রাকৃতভাষা বাংলাভাষা নহে, বররুচি তাহার সাক্ষ্য দিবেন। >W○eb বাংলা ব্যাকরণ তর্কের বিষয়টা কী, অধিকাংশ সময়ে তাহা বুঝিবার পূর্বেই তর্ক বাধিয়া যায়। সেটা যতই কম বোঝা যায়, তর্কের বেগ ততই প্রবল হয় ; অবশেষে খুনাখুনি রক্তপাতের পর হঠাৎ বাহির হইয়া পড়ে, দুই পক্ষের মধ্যে মতের বিশেষ অনৈক্য নাই । অতএব ঝগড়াটা কোনখানে, সেইটে আবিষ্কার করা একটা মস্ত কাজ । আমি কতকগুলা বাংলাপ্রত্যয় ও তাহার দৃষ্টান্ত সংগ্ৰহ করিয়া তাহা বিচারের জন্ত ‘পরিষৎ’-সভার হস্তে সমর্পণ করিয়াছিলাম আমার সে-লেখাটা এখনও পরিষৎপত্রিকায় বাহির হয় নাই, সুতরাং আমার তরফের বক্তব্য পাঠকের সম্মুখে অনুপস্থিত । শুনিয়াছি, কোন স্বযোগে তাহার প্রাফটি সংগ্ৰহ করিয়া লইয়া কোন কাগজে তাহার প্রতিবাদ বাহির হইয়া গেছে । আমার সাক্ষী হাজির নাই, এই অবকাশে বাদের পূর্বেই প্রতিবাদকে পাঠকসভায় উপস্থিত করিয়া একতরফা মীমাংসার চেষ্টা করাকে ঠিক ধর্মযুদ্ধ বলে না। এখন সে লইয়া আক্ষেপ করা বৃথা । বাংলায় জল হইতে জোলো, মদ হইতে মোদো, পানি হইতে পানতা, মুন হইতে নোনতা, বাদর হইতে বাদরাম, জ্যাঠা হইতে জ্যাঠাম প্রভৃতি চলিত কথাগুলি হইতে উয়া, তা, আম প্রভৃতি প্রত্যয় সংকলন করিয়া ভাবী ব্যাকরণকারের সম্মুখে উপস্থিত করিয়াছিলাম। ব্যাকরণ র্তাহারাই করিবেন, আমার কেবল মজুরিই সার। সেই মজুরির জন্য যে অল্প একটুখানি বেতন আমার পাওনা আছে বলিয়া আমি সাধারণের কাছে মনে মনে দাবি করিয়াছিলাম, তাহা নামঞ্জুর হইয়া গেলেও বিশেষ ক্ষতিবোধ করিতাম না। সম্প্রতি দাড়াইয়াছে এই যে, ভিক্ষায় কাজ নাই, এখন কুত্তা বুলাইয়া লইলে বাচি । ১ দ্রষ্টব্য “বাংলা কৃৎ ও তদ্ধিত", পৃ. ৩৮২ । ২ নুতন বাংলা ব্যাকরণ– শরচ্চত্র শাস্ত্রী : ভারতী, ১৩০৮ অগ্রহায়ণ ।