পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮২ রবীন্দ্র-রচনাবলী থেকেই আমার দুপুর রাত আরম্ভ হয়। তবে তুমি আমার ঘুমের জন্যে অত ব্যস্ত হয়েছিলে কেন।”

  • কালও সন্ধ্যার পর এইরকম কথা কইতে কইতে কত রাত পর্যন্ত তোমার আর ঘুম এল না, তাই আজ তোমাকে সকাল-সকাল ঘুমোতে বলছি।”

“মণি কি ঘুমিয়েছে।” "না, সে তোমার জন্যে মজুরির ডালের স্বপ তৈরি করে তবে ঘুমোতে যায়।” *বলো কী, মাসি, মণি কি তবে—” “সেই তো তোমার জন্তে সব পথ্যি তৈরি করে দেয়। তার কি বিশ্রাম আছে ।” “আমি ভাবতুম, মণি বুঝি—” “মেয়েমাহুষের কি আর এসব শিখতে হয়। দায়ে পড়লেই আপনি করে নেয়।” "আজ দুপুরবেলা মৌরলা মাছের যে ঝোল হয়েছিল তাতে বড়ে স্বন্দর একটি তার ছিল । আমি ভাবছিলুম, তোমারই হাতের তৈরি।”

  • কপাল আমার ! মণি কি আমাকে কিছু করতে দেয়। তোমার গামছা তোয়ালে নিজের হাতে কেচে শুকিয়ে রাখে । জানে যে, কোথাও কিছু নোংরা তুমি দেখতে পার না । তোমার বাইরের বৈঠকখানা যদি একবার দেখ তবে দেখতে পাবে, মণি দুবেলা সমস্ত ঝেড়ে মুছে কেমন তক্তকে ক’রে রেখে দিয়েছে ; আমি যদি তোমার এ ঘরে ওকে সর্বদা আসতে দিতুম তা হলে কি আর রক্ষা থাকত , ও তো তাই চায় ।”

“মণির শরীরটা বুঝি—” *ডাক্তাররা বলে, রোগীর ঘরে ওকে সর্বদ আনাগোনা করতে দেওয়া কিছু নয়। ওর মন বড়ো নরম কি না, তোমার কষ্ট দেখলে দুদিনে যে শরীর ভেঙে পড়বে।” “মাসি, ওকে তুমি ঠেকিয়ে রাখ কী ক’রে ।” “আমাকে ও বডেড মানে বলেই পারি। তবু বারবার গিয়ে খবর দিয়ে আসতে হয়— ঐ আমার আর-এক কাজ হয়েছে।” আকাশের তারাগুলি যেন করুণা-বিগলিত চোখের জলের মতো জলজল করিতে লাগিল । যে জীবন আজ বিদায় লইবার পথে আসিয়া দাড়াইয়াছে যতীন তাহাকে মনে মনে কৃতজ্ঞতার প্রণাম করিল— এবং সম্মুখে মৃত্যু আলিয়া অন্ধকারের ভিতর হইতে যে দক্ষিণ হাত বাড়াইয়া দিয়াছে যতীন স্নিগ্ধ বিশ্বাসের সহিত তাহার উপরে আপনার রোগব্লাস্ত হাতটি রাখিল ।