পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুরঙ্গ 84న আমরা সমুদ্রের ধারে বনের তলায় বালুর পরে তিন জনে বসিলাম। সমুদ্রের পশ্চিম প্রাস্তে স্বৰ্ষান্তটি আসন্ন অন্ধকারের সম্মুখে দিবসের শেষ প্রণামের মতো নত হইয়া পড়িল। গুরুজি গান ধরিলেন— আধুনিক কবির গানটা তার চলে— পথে যেতে তোমার সাথে মিলন হল দিনের শেষে । দেখতে গিয়ে, সাঝের আলো মিলিয়ে গেল এক নিমেষে । সেদিন গানটি বড়ে জমিল। দামিনীর চোখ দিয়া জল ঝরিয়া পড়িতে লাগিল । স্বামীজি অস্তর। ধরিলেন— দেখা তোমায় হোক বা না হোক তাহার লাগি করব না শোক, ক্ষণেক তুমি দাড়াও— তোমার চরণ ঢাকি এলোকেশে । স্বামী যখন থামিলেন সেই আকাশ-ভরা সমুদ্র-ভরা সন্ধ্যার স্তব্ধতা নীরব স্বরের রসে একটি সোনালি রঙের পাকা ফলের মতে ভরিয়া উঠিল। দামিনী মাথা নত করিয়া প্রণাম করিল— অনেক ক্ষণ মাথা তুলিল না, তার চুল এলাইয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়িল । o শচীশের ডায়ারিতে লেখা আছে : গুহার মধ্যে অনেকগুলি কামরা । আমি তার মধ্যে একটাতে কম্বল পাতিয়া শুইলাম । সেই গুহার অন্ধকারটা যেন একটা কালে জন্তুর মতে— তার ভিজ নিশ্বাস যেন আমার গায়ে লাগিতেছে । আমার মনে হইল সে যেন আদিম কালের প্রথম স্বষ্টির প্রথম জন্তু ; তার চোখ নাই, কান নাই, কেবল তার মস্ত একটা ক্ষুধা আছে ; সে অনন্ত কাল এই গুহার মধ্যে বন্দী ; তার মন নাই— সে কিছুই জানে না, কেবল তার ব্যথা আছে— সে নিঃশব্দে কঁাদে । ক্লান্তি একটা ভারের মতো আমার সমস্ত শরীরকে চাপিয়া ধরিল, কিন্তু কোনোমতেই ঘুম আসিল না। একটা কী পাখি, হয়তো বাদুড় হইবে, ভিতর হইতে বাহিরে কিম্ব বাহির হইতে ভিতরে ঝপ, বাপ, ডানার শব্দ করিতে করিতে অন্ধকার হইতে