পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{{ {\o রবীক্স-রচনাবলী দ্বিতীয় বলয়খনি ছুড়ি দিয়া জলে গুরু কহিলেন, ‘আছে ওই নদীতলে |’ উভয় পাঠে ছন্দের যে ভিন্নতা সে সম্পর্কে মানসী'র প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় নিম্নলিখিত অংশ প্রণিধানযোগ্য— এই গ্রন্থের অনেকগুলি কবিতায় যুক্তাক্ষরকে দুই অক্ষর-স্বরূপ গণ্য করা হইয়াছে। সেরূপ স্থলে সংস্কৃত ছন্দের নিয়মানুসারে যুক্তাক্ষরকে দীর্ঘ করিয়া না পড়িলে ছন্দ রক্ষা করা অসম্ভব হইবে। যথা— 靜 নিম্নে যমুনা বহে স্বচ্ছ শীতল ; উর্ধের্ব পাষাণতট, শু্যাম শিলাতল । ‘নিম্নে’ ‘স্বচ্ছ’ এবং উর্ধের্ব এই কয়েকটি শব্দে তিন মাত্রা গণনা না করিলে পয়ার ছন্দ থাকে না। আমার বিশ্বাস, যুক্তাক্ষরকে দুই অক্ষর-স্বরূপ গণনা করাই স্বাভাবিক এবং তাহাতে ছন্দের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ; কেবল বাঙ্গালা ছন্দ পাঠ করিয়া বিকৃত অভ্যাস হওয়াতেই সহসা তাহা দুঃসাধ্য মনে হইতে পারে। শব্দের আরম্ভ-অক্ষর যুক্ত হইলেও তাহাকে যুক্তাক্ষর-স্বরূপে গণনা করা যায় নাই— পাঠকেরা এইরূপ আরো দুই-একটি ব্যতিক্রম দেখিতে পাইবেন . —গ্রন্থকার তথ্য ও সত্য’ প্রবন্ধে (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা, ১৯ ফাল্গুন ১৩৩০ ) রবীন্দ্রনাথ ‘শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা’ কবিতাটি সম্বন্ধে বলিয়াছেন— যারা তথ্যের দিকে দৃষ্টি রাখে তাদের হাতে কবিদের কী দুৰ্গতি ঘটে তার একটা नृछेख् हेि। আমি কবিতায় একটি বৌদ্ধকাহিনী লিখেছিলেম । বিষয়টি হচ্ছে এই : একদা প্রভাতে অনাথপিগুদ প্রভু বুদ্ধের নামে শ্রাবস্তী নগরের পথে ভিক্ষ মেগে চলেছেন। ধনীরা এনে দিল ধন, শ্রেষ্ঠীরা এনে দিল রত্ন, রাজঘরের বধুরা এনে দিলে হীরামুক্তার কষ্ঠ । সব পথে পড়ে রইল, ভিক্ষার ঝুলিতে উঠল না । বেলা যায়, নগরের বাহিরে পথের ধারে গাছের তলায় অনথিপিওদ দেখলেন এক ভিক্ষুক মেয়ে । তার আর কিছুই নেই, গায়ে একখানি জীর্ণ চীর । গাছের আড়ালে দাড়িয়ে এই মেয়ে সেই চারখানি প্রভুর নামে দান করলে। অনাথপিগুদ বললেন, অনেকে অনেক দিয়েছে, কিন্তু সব তো কেউ দেয় নি। এতক্ষণে আমার প্রভুর যোগ্য দান মিলল, আমি ধন্য হলুম।