পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে شهد ©ጫጫ মলিন সম্বন্ধ হতে মুক্ত হয়। অশেষের প্রসাদ-বঞ্চিত সেই বিশেষভোগ্য টাকার বর্বরতায় বস্কন্ধরা পীড়িত। দৈন্তের ভারের মতো আর ভার নেই। টাকা যখন দৈন্তের বাহন হয় তখন তার চাকার তলায় কত মানুষ ধূলিতে ধূলি হয়ে যায়। সেই দৈন্তেরই নাম প্রতাপ, তা আলোক নয়, তা কেবলমাত্র দাহু— সে যার কেবলমাত্র তারই, এইজন্তে তাকে অস্থ ভব করা যায় কিন্তু স্বীকার করা যায় না । নিখিলের সেই স্বীকার-করাকেই বলে প্রকাশ । এই প্রতাপের রক্তপঙ্কিল অশুচি স্পর্শকে প্রকৃতি তার শুামল অমৃতের ধারা দিয়ে মুছে মুছে দিচ্ছে । ফুলগুলি স্বষ্টির অন্তঃপুর থেকে সৌন্দর্ধের ডালি বহন করে নিয়ে এসে প্রতাপের কলুষিত পদচিহ্নগুলোকে লজ্জায় কেবলই ঢাকা দিয়ে দিয়ে চলেছে। জানিয়ে দিচ্ছে যে, “আমরা ছোটো, আমরা কোমল, কিন্তু আমরাই চিরকালের । কেননা, সকলেই আমাদের বরণ ক’রে নিয়েছে— আর, ঐ-যে উদ্যতমুষ্টি বিভীষিকা, যে পাথরের পরে পাথর চাপিয়ে আপনার কেল্লাকে অভ্ৰভেদী ক’রে তুলছে সে কিছুই নয়, কেননা ওর নিজে ছাড়া আর কেউই ওকে স্বীকার করছে না—মাধবীৰিতানের স্বন্দরী ছায়াটিও ওর চেয়ে সত্য ।” এই যে তাজমহল— এমন তাজমহল, তার কারণ সাজাহানের হৃদয়ে তার প্রেম, র্তার বিরহবেদনার আনন্দ অনন্তকে স্পর্শ করেছিল ; তার সিংহাসনকে তিনি যেকোঠাতেই রাখুন তিনি তার তাজমহলকে তার আপন থেকে মুক্ত ক’রে দিয়ে গেছেন । তার আর আপন-পর নেই, সে অনস্তের বেদি । সাজাহানের প্রতাপ যখন দক্ষ্যবৃত্তি করে তখন তার লুঠের মাল যতই প্রভূত হোক তাতে ক’রে তার নিজের থলিটারও পেট ভরে না, স্বতরাং ক্ষুধার অন্ধকারের মধ্যে তলিয়ে লুপ্ত হয়ে যায় । আর, যেখানে পরিপূর্ণতার উপলব্ধি তার চিত্তে আবিভূত হয় সেখানে সেই দৈববাণীটিকে নিজের কোষাগারে নিজের বিপুল রাজ্যে সাম্রাজ্যে কোথাও সে আর ধ’রে রেখে দিতে পারে না। সর্বজনের ও নিত্যকালের হাতে তাকে সমর্পণ করা ছাড়া আর গতি নেই। একেই বলে প্রকাশ । আমাদের সমস্ত মঙ্গল-অনুষ্ঠানে গ্রহণ করবার মন্ত্র হচ্ছে ওঁ— অর্থাৎ, ই । তাজমহল হচ্ছে সেই নিত্য-উচ্চারিত . ওঁ— নিখিলের সেই গ্রহণ-মন্ত্র মূর্তিমান । সাজাহানের সিংহাসনে সেই মন্ত্র পড়া হয় নি ; একদিন তার যতই শক্তি ৰাক্-লা কেন, সে তো 'না' হয়ে কোথায় তলিয়ে গেল। তেমনি কত কত বড়ো বড়ো নামধারী 'না'এর দল আজ দণ্ড ভরে বিলুপ্তির দিকে চলেছে, তাদের কামানগৰ্জিত ও বন্দীদের শৃঙ্খল-ঝংকৃত কলরবে কান বধির হয়ে গেল, কিন্তু তারা মায়া, তারা নিজেরই মৃত্যুর নৈবেদ্য নিয়ে কালরাত্রিপারাবারের কালীঘাটে সব যাত্ৰা ক’রে S) 《,