পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88ના রবীন্দ্র-রচনাবলী তখন আপনার দেবতাকে পূজার লোভ দেখিয়ে দলপতির পদে নিয়োগ করেছে বলে কল্পনা করেছে। কৃপণ যেমন করে আপনার টাকার থলি লুকিয়ে রাখে তেমনি করে আজও আমরা আমাদের ভগবানকে আপনার সম্প্রদায়ের লোহার সিন্দুকে তালা বন্ধ করে রেখেছি বলে আরাম বোধ করি এ ং মনে করি যারা আমাদের দলের নামটুকু ধারণ না করেছে তারা ঈশ্বরের ত্যাজ্যপুত্ররূপে কল্যাণের অধিকার হতে বঞ্চিত । মানুষ ধর্মের দোহাই দিয়েই এই কথা বলেছে এই সংসার বিধাতার প্রবঞ্চনা, মানবজন্মটাই পাপ, আমরা ভারবাহী বলদের মতে হয় কোনো পূর্বপিতামহের নয় নিজের জন্মজন্মান্তরের পাপের বোঝা বহে নিয়ে অন্তহীন পথে চলেছি। ধর্মের নামেই অকারণ ভয়ে মানুষ পীড়িত হয়েছে এবং অদ্ভূত মূঢ়তায় আপনাকে ইচ্ছাপূর্বক অন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু, তবু এই-সমস্ত বিকৃতি ও ব্যর্থতার ভিতর দিয়েও ধর্মের সত্যরূপ নিত্যরূপ ব্যক্ত হয়ে উঠছে। বিদ্রোহী মানুষ সমূলে তাকে ছেদন করবার চেষ্টা করে কেবল তার বাধাগুলিকেই ছেদন করছে। অবশেষে এই কথা মামুষের উপলব্ধি করবার সময় এসেছে যে, অসীমের আরাধনা মনুষ্যত্বের কোনো অঙ্গের উচ্ছেদ সাধন নয়, মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ পরিণতি। অনন্তকে একই কালে এক দিকে আনন্দের দ্বারা অন্য দিকে তপস্যার দ্বারা উপলব্ধি করতে হবে ; কেবলই রসে মজে থাকতে হবে না— জ্ঞানে বুঝতে হবে, কর্মে পেতে হবে, তাকে আমার মধ্যে যেমন আনতে হবে তেমনি আমার শক্তিকে তার মধ্যে প্রেরণ করতে হবে । সেই অনস্তস্বরূপের সম্বন্ধে মানুষ এক দিকে বলেছে আনন্দ হতেই তিনি যা-কিছু সমস্ত স্বষ্টি করছেন, আবার আর-এক দিকে বলেছে : স তপোহতপাত, তিনি তপস্তাদ্বারা যা-কিছু সমস্ত স্বষ্টি করেছেন। এই দুইই একই কালে সত্য। তিনি আনন্দ হতে স্বষ্টিকে উৎসারিত করছেন, তিনি তপস্তাদ্বারা সৃষ্টিকে কালের ক্ষেত্রে প্রসারিত করে নিয়ে চলেছেন। একই কালে তাকে তার সেই আনন্দ এবং তার সেই প্রকাশের দিক থেকে গ্রহণ না করলে আমরা চাদ ধরছি কল্পনা করে কেবল আকাশ ধরবার চেষ্টা করব। বহুকাল পূর্বে একবার বৈরাগীর মুখে গান শুনেছিলুম ; আমি কোথায় পাব তারে, অামার মনের মানুষ যে রে! সে আরও গেয়েছিল : আমার মনের মাঙ্গুষ যেখানে, আমি কোন সন্ধানে যাই সেখানে। তার এই গানের কথাগুলি আজ পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যখন শুনেছি তখন এই গানটিকে মনের মধ্যে কোনো স্পষ্ট ভাষায় ব্যাখ্যা করেছি ত নয়, কিম্বা এ কথা আমার জানবার প্রয়োজন বোধ ছয় নি যে যারা গাচ্ছে তারা সাম্প্রদায়িক ভাবে এর ঠিক কী অর্থ বোধে । কেননা,