পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

პ 8 o রবীন্দ্র-রচনাবলী বিলম্ব হইল না। আমার মনে হইল, ফুলগুলিকে যেন ইস্কুলের পড়া-না-পার ছেলেদের মতো প্রতিদিন আমি বেঞ্চের উপর দাড় করাইয়া রাখি । সেইদিন সন্ধ্যার সময় যখন ছাদে বসিয়াছি, বোষ্টমী অামার পায়ের কাছে আসিয়া বসিল । কহিল, "আজ সকালে নাম শুনাইবার সময় তোমার প্রসাদী ফুলগুলি ঘরে ঘরে দিয়া আসিয়াছি। আমার ভক্তি দেখিয়া বেণী চক্রবর্তী হাসিয়া বলিল, ‘পাগলি, কাকে ভক্তি করিল তুই ? বিশ্বের লোকে যে তাকে মন্দ বলে।’ ইাগে, সৰুলে নাকি তোমাকে গালি দেয় ?” কেবল এক মুহূর্তের জন্য মনটা সংকুচিত হইয়া গেল । কালির ছিটা এত দূরেও ছড়ায় ! বোষ্টমী বলিল, “ৰেণী ভাবিয়াছিল, আমার ভক্তিটাকে এক ফুয়ে নিবাইয়া দিবে। কিন্তু, এ তো তেলের বাতি নয়, এ যে আগুন ! আমার গেীর, ওরা তোমাকে গালি দেয় কেন গে৷ ” আমি বলিলাম, “আমার পাওনা আছে বলিয়া । আমি হয়তো একদিন লুকাইয়া উহাদের মন চুরি করিবার লোভ করিয়াছিলাম।” বোষ্টমী কহিল, "মামুষের মনে বিষ যে কত সে তো দেখিলে । লো ভ আর টি-কিবে না।” আমি বলিলাম, “মনে লোভ থাকিলেই মারের মুখে থাকিতে হয় । তখন নিজেকে মারিবার বিষ নিজের মনই জোগায় । তাই আমার ওঝ। আমারই মনটাকে নির্বিষ করিবার জন্য এত কড়া করিয়া ঝাড় দিতেছেন।” বোষ্টমী কহিল, "দয়াল ঠাকুর মারিতে মারিতে তবে মারকে খেদান । শেষ পর্যস্ত ষে সহিতে পারে সেই বাচিয়া যায় ।” সেইদিন সন্ধ্যার সময় অন্ধকার ছাদের উপর সন্ধ্যাতারা উঠিয়া আবার অস্ত গেল ; বোষ্টমী তাহার জীবনের কথা আমাকে শুনাইল ।– আমার স্বামী বড়ো সাদা মানুষ । কোনো কোনো লোকে মনে করিত র্তাহার বুঝিবার শক্তি কম। কিন্তু, আমি জানি, যাহারা সাদা করিয়া বুঝিতে পারে তাহারাই মোটের উপর ঠিক বোঝে । ইহাও দেখিয়াছি, তাহার চাষবাস জমিজমার কাজে তিনি যে ঠকিতেন তাহা নহে। বিষয়কাজ এবং ঘরের কাজ দুইই র্তাহার গোছালো ছিল । ধান-চাল-পাটের সামান্ত যে একটু ব্যাবসা করিতেন, কখনো তাছাতে লোকসান করেন নাই। কেননা, তাহার