পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిసిన রবীন্দ্র-রচনাবলী লাগিল । খোজ করিতে করিতে ক্রমে এক বছর যখন কাটিল তখন, মাখন যে বরদার প্রতি অনাবশ্যক কঠোরাচরণ করিয়াছেন, সে-কথা পিসি ও বলিতে শুরু করিলেন । দুই বছর যখন গেল তখন পাড়া-প্রতিবেশীরাও বলিতে লাগিল, বরদার পড়াশুনায় মন ছিল না বটে, কিন্তু মানুষটি বড়ো ভালো ছিল। বরদার অদর্শনকাল যতই দীর্ঘ হুইল ততই, তার স্বভাব যে অত্যন্ত নির্মল ছিল, এমন-কি সে যে তামাকটা পর্যন্ত খাইত না, এই অন্ধ বিশ্বাস পাড়ার লোকের মনে বদ্ধমূল হইতে লাগিল। স্কুলের পণ্ডিতমশায় স্বয়ং বলিলেন, এইজন্যই তে। তিনি বরদাকে গোতম মুনি নাম দিয়াছিলেন, তখন হইতেই উহার বুদ্ধি বৈরাগ্যে একেবারে নিরেট হইয়া ছিল। পিসি প্রত্যহুই অন্তত একবার করিয়া তার দাদার জেদী মেজাজের পরে দোষারোপ করিয়া বলিতে লাগিলেন, 'বরদার এত লেখাপড়ার দরকারই বা কী ছিল। টাকার তো অভাব নাই । যাই বল, বাপু, তার শরীরে কিন্তু দোষ ছিল না। আহা, সোনার টুকরো ছেলে । তার স্বামী যে পবিত্রতার আদর্শ ছিল এবং সংসারস্থদ্ধ সকলেই তার প্রতি অন্যায় করিয়াছে, সকল দুঃখের মধ্যে এই সাস্বনায়, এই গৌরবে ষোড়শীর মন ভরিয়া উঠিতে লাগিল । এদিকে বাপের ব্যথিত হৃদয়ের সমস্ত স্নেহ দ্বিগুণ করিয়া ষোড়শীর উপর আসিয়া পড়িল । বউমা যাতে মুখে থাকে, মাখনের এই একমাত্র ভাবনা । তার বড়ো ইচ্ছা, ষোড়শী তাকে এমন কিছু ফরমাশ করে যেটা দুর্লভ– অনেকটা কষ্ট করিয়া, লোকসান করিয়া তিনি তাকে একটু খুশি করিতে পারিলে যেন বাচেন—তিনি এমন করিয়া ত্যাগ স্বীকার করিতে চান যেটা র্তার পক্ষে প্রায়শ্চিত্তের মতো হইতে পারে। २ ষোড়শী পনেরো বছরে পড়িল । ঘরের মধ্যে একলা বসিয়া যখন-তখন তার চোখ জলে ভরিয়া আসে। চিরপরিচিত সংসারটা তাকে চারি দিকে যেন জাটিয়া ধরে, তার প্রাণ হাপাইয়া ওঠে । তার ঘরের প্রত্যেক জিনিসটা, তার বারানার প্রত্যেক রেলিঙট, আলিসার উপর যে-কয়টা ফুলের গাছের টব চিরকাল ধরিয়া খাড়া দাড়াইয়া আছে, তারা সকলেই যেন অস্তরে অস্তরে তাকে বিরক্ত করিতে থাকিত । পদে পদে ঘরের খাটট, আলনাটা, আলমারিটা— তার জীবনের শূন্ততাকে বিস্তারিত করিয়া ব্যাখ্যা করে ; সমস্ত জিনিসপত্রের উপর তার রাগ হইতে থাকে। ংসারে তার একমাত্র আরামের জায়গা ছিল ঐ জানালার কাছটা। যে-বিশ্বট তার বাহিরে সেইটেই ছিল তার সব-চেয়ে আপন। কেননা, তার 'ঘর হৈল বাহির, বাহির হৈল ঘর” । நீர்