পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন 984 প্রকাশ করেন, তারাই নিয়মকে পার হয়ে চলে গেছে। নিয়মের বন্ধন তাদের পক্ষে নেই যে তা নয়, কিন্তু সে যে আনন্দেরই বন্ধন, সে যে প্রেমিকের পক্ষে প্রিয়তমের ভুজবন্ধনের মতে । তাতে দুঃখ নেই, কোনো দুঃখ নেই। সকল বন্ধনই সে যে খুশি হয়ে গ্রহণ করে, কোনোটাকেই এড়াতে চায় না। কেননা, সমস্ত বন্ধনের মধ্যেই সে যে আনন্দের নিবিড় স্পর্শ উপলব্ধি করতে থাকে। বস্তুত যেখানে নিয়ম নেই, যেখানে উচ্ছৃঙ্খল উন্মত্তত, সেইখানেই তাকে বাধে, তাকে মারে— সেইখানেই অসীমের সঙ্গে বিচ্ছেদ, পাপের যন্ত্রণা। প্রবৃত্তির আকর্ষণে সত্যের মৃদৃঢ় নিয়মবন্ধন থেকে যখন সে স্খলিত হয়ে পড়ে তখনই সে মাতার আলিঙ্গনদ্রষ্ট শিশুর মতো কেঁদে উঠে বলে ; মা মা হিংসীঃ । আমাকে আঘাত কোরো না । সে বলে, বাধো, আমাকে বাধো, তোমার নিয়মে আমাকে বাধো, অন্তরে বাধো, বাহিরে বাধো— আমাকে আচ্ছন্ন ক’রে, আবৃত করে বেঁধে রাখে ; কোথাও কিছু ফাক রেখে না, শক্ত করে ধরে ; তোমারই নিয়মের বাহুপাশে বাধা পড়ে তোমার আনন্দের সঙ্গে জড়িত হয়ে থাকি। আমাকে পাপের মৃত্যুবন্ধন থেকে টেনে নিয়ে তুমি দৃঢ় করে রক্ষা করে। নিয়মকে আনন্দের বিপরীত জ্ঞান করে কেউ কেউ যেমন মাংলামিকেই আনন্দ বলে ভুল করে তেমনি আমাদের দেশে এমন লোক প্রায় দেখা যায় যারা কর্মকে মুক্তির বিপরীত বলে কল্পনা করেন। র্তারা মনে করেন কর্ম পদার্থটা স্কুল, ওটা আত্মার পক্ষে বন্ধন । কিন্তু, এই কথা মনে রাখতে হবে, নিয়মেই যেমন আনন্দের প্রকাশ কর্মেই তেমনি আত্মার মুক্তি । আপনার ভিতরেই আপনার প্রকাশ হতে পারে না বলেই আনন্দ বাহিরের নিয়মকে ইচ্ছা করে, তেমনি আপনার ভিতরেই আপনার মুক্তি হতে পারে না বলেই আত্মা মুক্তির জন্যে বাহিরের কর্মকে চায়। মানুষের আত্মা কর্মেই আপনার ভিতর থেকে আপনাকে মুক্ত করছে ; তাই যদি না হত তা হলে কখনোই সে ইচ্ছা করে কর্ম করত না । মানুষ যতই কর্ম করছে ততই সে আপনার ভিতরকার অদৃশ্বকে দৃশ্ব করে তুলছে, ততই সে আপনার সুদূরবর্তী অনাগতকে এগিয়ে নিয়ে আসছে। এই উপায়ে মানুষ আপনাকে কেবলই স্পষ্ট করে তুলছে— মানুষ আপনার নানা কর্মের মধ্যে, রাষ্ট্রের মধ্যে, সমাজের মধ্যে, আপনাকেই নানা দিক থেকে দেখতে পাচ্ছে। এই দেখতে পাওয়াই মুক্তি। অন্ধকার মুক্তি নয়, অস্পষ্টত মুক্তি নয়। অস্পষ্টতার মতো ভয়ংকর বন্ধন নেই । অস্পষ্টতাকে ভেদ করে উঠবার জন্যেই বীজের মধ্যে অকুরের চেষ্টা, কুঁড়ির মধ্যে ফুলের প্রয়াস। অস্পষ্টতার আবরণকে ভেদ করে স্বপরিস্ফুট হবার জন্যেই আমাদের চিত্তের ভিতরকার ভাবরাশি বাইরে আকার 》에는\)