পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা ९ ०७ বিপিন । আমাদের সভার উদ্দেশু সংকীর্ণ নয়, এবং বৃহৎ উদ্দেশু সাধন করতে গেলে বিচিত্র শ্রেণীর ও বিচিত্র শক্তির লোকের বিচিত্র চেষ্টায় প্রবৃত্ত হওয়া চাই । স্বদেশের হিতসাধন একজন স্ত্রীলোক যেরকম পারবেন তুমি সেরকম পারবে না, এবং তুমি যেরকম পারবে একজন স্ত্রীলোক সেরকম পারবেন না— অতএব সভার উদেশ্বকে সর্বাঙ্গসম্পূর্ণভাবে সাধন করতে গেলে তোমারও যেমন দরকার স্ত্রীসভ্যের তেমনি দরকার । } শ্ৰীশ । যারা কাজ করতে চায় না তারাই উদ্দেশুকে ফলাও করে তোলে । যথার্থ কাজ করতে গেলেই লক্ষ্যকে সীমাবদ্ধ করতে হয় । আমাদের সভার উদ্দেশ্যকে যত বৃহৎ মনে করে তুমি বেশ নিশ্চিন্ত আছ আমি তত বৃহৎ মনে করি নে। বিপিন। আমাদের সভার কার্যক্ষেত্র অন্তত এতটা বৃহৎ যে তোমাকে গ্রহণ করেছে বলে আমাকে পরিত্যাগ করতে হয় নি এবং আমাকে গ্রহণ করেছে বলে তোমাকে পরিত্যাগ করতে হয় নি। তোমার আমার উভয়েরই যদি এখানে স্থান হয়ে থাকে, আমাদের দুজনেরই যদি এখানে উপযোগিতা ও আবশ্বকতা থাকে, তা হলে আরও একজন ভিন্ন প্রকৃতির লোকের এখানে স্থান হওয়া এমন কী কঠিন । শ্ৰীশ । উদারতা অতি উত্তম জিনিস, সে আমি নীতিশাস্ত্রে পড়েছি । আমি তোমার সেই উদারতাকে নষ্ট করতে চাই নে, বিভক্ত করতে চাই মাত্র। স্ত্রীলোকেরা যে কাজ করতে পারেন তার জন্যে র্তারা স্বতন্ত্র সভা করুন, আমরা তার সভ্য হবার প্রার্থী হব না, এবং আমাদের সভাও আমাদেরই থাক। নইলে আমরা পরস্পরের কাজের বাধা হব মাত্র। মাথাটা চিন্তা করে মরুক, উদরটা পরিপাক করতে থাক— পাকযন্ত্রটি মাথার মধ্যে এবং মস্তিষ্কটি পেটের মধ্যে প্রবেশচেষ্টা না করলেই বস্ । বিপিন। কিন্তু তাই বলে মাথাটা ছিন্ন করে এক জায়গায় এবং পাকযন্ত্রটাকে আর এক জায়গায় রাখলেও কাজের সুবিধা হয় না । শ্ৰীশ । ( অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া) উপমা তো আর যুক্তি নয় যে সেটাকে খণ্ডন করলেই আমার কথাটাকে খণ্ডন করা হল উপমা কেবল খানিক দূর পর্যন্ত খাটে— বিপিন। অর্থাৎ, যতটুকু কেবল তোমার যুক্তির পক্ষে খাটে। পূর্ণ। (অত্যন্ত বিমনা হইয়া) বিপিনবাবু, আমার মত এই যে, আমাদের এই সকল । কাজে মেয়েরা অগ্রসর হয়ে এলে তাতে তাদের মাধুর্য নষ্ট হয়। চন্দ্রবাবু ( একখানা বই চক্ষের অত্যন্ত কাছে ধরিয়া) মহৎ কার্যে যে মাধুর্য নষ্ট হয় সে মাধুর্য সযত্বে রক্ষা করবার যোগ্য নয়। শ্ৰীশ । না চন্দ্রবাবু, আমি ও-সব সৌন্দৰ্য-মাধুর্ষের কথা আনছিই নে। সৈন্যদের