পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন § 04 তিনি বললেন, বা, এ যে দেখছি আমার সুর শিখেছে, তাতে আবার আধো আধো বাণী জুড়ে দিয়েছে— সেই বাণীর আধখানা ফোটে আধখানা ফোটে না । তার স্বরে সেই অধিফোটা স্থর মিলিয়েছি শুনে তিনি বললেন, খুশি হয়েছি। এই-ষে র্তার মুখের খুশি– না দেখতে পেলে সে শিল্পী নয়, সে কবি নয়, সে গায়ক নয়। যে মামুষের সভায় দাড়িয়ে মানুষ কবে, জয়মাল্য দেবে এই অপেক্ষায় বসে আছে সে কিছুই নয়। কিন্তু, শিল্পী কেবলমাত্র রেখার সৌন্দর্য নিল, কবি স্বর নিল, রস নিল । এর কেউই সব নিতে পারল না। সব নিতে পারা যায় একমাত্র সমস্ত জীবন দিয়ে । র্তারই জিনিস র্তার সঙ্গে মিলে নিতে হবে। জীবনকে তার অমৃতরসে কানায় কানায় পূর্ণ করে যেদিন নিবেদন করতে পারব সেদিন জীবন ধন্য হবে । তার চেয়ে বড়ো নিবেদন আর কী আছে । আমরা তো তা পারি না। তার নৈবেদ্য থেকে সমস্ত চুরি করি ; কৃপণতা করে বলি, নিজের জন্য সবই নেব কিন্তু তাকে দেবার বেলা উদত্তমাত্র দিয়ে নিশ্চিন্ত হব । তাকে সমস্ত নিবেদন করে দিতে পারলে সব দরকার ভরে যায়, সব অভাব পূর্ণ হয়ে যায়। তাই বলছি, আজ সেই জীবনের পরিপূর্ণ নিবেদনের দিন । আজ বলবার দিন, তুমি আমাকে তোমার আসনের পাশে বসিয়েছিলে, কিন্তু আমি ভুলেছিলুম, আমি সব জুড়ে নিজেই বসেছিলুম— তোমার সঙ্গে বসব এ গৌরব ভুলে গেলুম— তোমাতে আমাতে মিলে বসবার যে অপরূপ সার্থকতা এ জীবনে কি তা হবে না। আজ এই কথা বলব, আমার আসন শূন্ত রয়ে গেছে। তুমি এসো, তুমি এসে, তুমি এসে একে পূর্ণ করো। তুমি না এলে আমার এই গৌরবে কাজ কী, আমার ধুলোর মধ্যে ভিক্ষুকের মতো পড়ে থাকা যে ভালো। হায় হায়, ধুলোবালি নিয়ে বাস্তবিকই এই যে খেলা করছি এই কি আমার স্থাই । এই স্বষ্টির কাজের জন্যেই কি আমার জীবনের এত আয়োজন হয়েছিল। মাঝে মাঝে কি পরম দুঃখে পরম আঘাতে এগুলো ভেঙে যায় নি। খেলাঘর একটু নাড়া দিলেই পড়ে যায়। কিন্তু, তোমাতে আমাতে মিলে যে স্বষ্টি ত কি একটু ফুয়ে এমনি করে পড়ে যেতে পারে। খেলাঘর কত যত্ন করেই গড়ে তুলি ; যেদিন আঘাত দিয়ে ভেঙে দেন সেদিন দেখিয়ে দেন যে র্তাকে বাদ দিয়ে একলা স্বষ্টি করবার কোনো সাধ্য আমাদের নেই। সেদিন কেঁদে উঠে আবার ভূলি, আবার ছিদ্র ঢাকবার চেষ্টা করি— এমনি করে সব ব্যর্থ হয়ে যায় । সব কৃত্রিমতা দূর করে দিয়ে আজ একদিনের জন্ত দরজা খুলে ডাকি— হে আমার চিরদিনের অধীশ্বর, তোমাকে একদিনের জন্যেই ডাকলুম। এই জীবনে