পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা ২৩৭ সেই খবরটা আমি মনে মনে পাচ্ছি। বিশে ডাকাত যেমন খবর দিয়ে ডাকাতি করত আমার অজানা অভিসারিকা তেমনি পূর্বে হতেই আমাকে অভিসারের খবর পাঠিয়েছে। বিপিন। তোমার সেই ছাতের বারান্দাটা সাজিয়ে প্রস্তুত হয়ে থেকে । শ্ৰীশ । তা, আমার সেই দক্ষিণের বারান্দায় একটি চৌকিতে আমি বসি, আর-একটি চৌকি সাজানো থাকে। বিপিন । সেটাতে আমি এসে বসি । শ্ৰীশ । মধ্যভাবে গুড়ং দদ্যাৎ, অভাবপক্ষে তোমাকে নিয়ে চলে । বিপিন। মধুময়ী যখন আসবেন তখন হতভাগার ভাগ্যে লগুড়ং দদ্যাৎ । রসিক । ( জনাস্তিকে ) শ্ৰীশবাবু, আপনার সেই দক্ষিণের ছাতটিকে চিহ্নিত করে রাখবার জন্যে যে পতাকা ওড়ানো আবশ্বক সেটা যে ফেলে এলেন। । শ্ৰীশ । রুমালটা কি এখন চেষ্টা করলে পাওয়া যেতে পারবে ? রসিক । চেষ্টা করতে দোষ কী । ঐশ। বিপিন, তুমি ভাই রসিকবাবুর সঙ্গে একটু কথাবার্তা কও, আমি চট্‌ করে আসছি । [ প্রস্থান বিপিন। আচ্ছ রসিকবাবু, রাগ করবেন না— রসিক। যদি বা করি আপনার ভয় করবার কোনো কারণ নেই, আমি ভারী দুর্বল । বিপিন। দু-একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব, আপনি বিরক্ত হবেন না । রসিক । আমার বয়স সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন নয় তো ? বিপিন । না । রসিক। তবে জিজ্ঞাসা করুন, ঠিক উত্তর পাবেন। বিপিন। সেদিন যে মহিলাটিকে দেখলুম, তিনি— রসিক। তিনি আলোচনার যোগ্য, আপনি সংকোচ করবেন না বিপিনবাবু— তার সম্বন্ধে যদি আপনি মাঝে মাঝে চিন্তা ও চর্চা করে থাকেন তবে তাতে আপনার অসাধারণত্ব প্রমাণ হয় না, আমরাও ঠিক ওই কাজ করে থাকি । বিপিন। অবলাকাস্তবাবু বুঝি— রসিক। তার কথা বলবেন না, তার মুখে অন্য কথা নেই। বিপিন । তিনি কি— রসিক। ই, তাই বটে। তবে হয়েছে কী, তিনি নৃপবালা নীরবালা দুজনের কাকে যে বেশি ভালোবাসেন স্থির করে উঠতে পারেন না— তিনি দুজনের মধ্যে সর্বদাই দোলায়মান।