পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শক্তিনিকেতন 8רט বাপ দিয়ে পড়বে। মানুষ বিষয়বিষয়সের মত্ততায় বিহ্বল হয়ে সেই আনন্দরসকে পান করল না। সেই আনন্দের মধ্যে বীর্যের অগ্নি রয়েছে, সেই অগ্নিতেই সমস্ত গ্রহচন্দ্রলোক দীপ্যমান হয়ে উঠেছে— সেই বীর্যের অগ্নি মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলল না। অথচ মানুষের অন্তরাত্মা জানে যে জগতের স্বধাপাত্র পরিপূর্ণ আছে বলেই মৃত্যু এখানে কেবলই মরছে এবং জীবনের ধারাকে প্রবাহিত করছে - প্রাণের কোথাও বিরাম নেই । অস্তরাত্মা জানে যে সেই স্বধার ধারা জীবন থেকে জীবনাস্তরে, লোক থেকে লোকাস্তরে বয়েই চলেছে। কত যোগী, কত প্রেমী, কত মহাপুরুষ সেই স্থধার ধারায় সমস্ত জীবনকে ডুবিয়ে অমৃতত্বের সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা মানুষকে ডাক দিয়ে বলেছেন : তোমরা অমৃতের পুত্র, মৃত্যুর পুত্র নও। কিন্তু, সে কথায় মানুষের বিশ্বাস হয় না। সে যে বিষয়ের দাসত্ব করছে সেইটেই তার কাছে বাস্তব, আর এ-সব কথা তার কাছে শূন্ত ভাবুকতামাত্র। সে তাই এ-সব কথাকে বিদ্রুপ করে, আঘাত করে, অবিশ্বাস করে। র্যারা অমৃতের বাণী এনেছেন মানুষ তাই তাদের মেরেছে। র্তারা যেমন মানুষের হাতে মার খেয়েছেন এমন আর কেউ নয়, অথচ তারা তো মলেন না। তাদের প্রাণই শত সহস্ৰ বৎসর ধরে সজীব হয়ে রইল। কারণ, তারাই যে মার খেতে পারেন ; তারা যে অমৃতের সন্ধান পেয়েছেন । মৃত্যুর দ্বারা তারা অমৃতের প্রমাণ করেন। মানুষের দরজায় এসে দাড়ালে মানুষ তাদের আতিথ্য দেয় নি, আতিথ্য দেবে না ; মানুষ র্তাদের শত্রু বলে জেনেছে। কারণ, আমরা আমাদের যত-কিছু মত বিশ্বাস সমস্ত পাথরে বঁাধিয়ে রেখে দিয়েছি, ওই-সব পাগলকে ঘরে ঢোকালে সে-সমস্ত যে বিপর্যন্ত হয়ে যাবে এই মানুষের মস্ত ভয়। মৃত্যুকে কোঁটার মধ্যে পুরে লোহার সিন্দুকে লুকিয়ে রেখে দিয়েছি, ওরা ঘরে এলে কি আর রক্ষা আছে! লোহার সিন্দুক ভেঙে যে মৃত্যুকে এরা বার করবে। _ সেই মৃত্যুকেই তারা মারতে আসেন। তারা মরে প্রমাণ করেন আছে সুধা সমস্ত বিশ্বকে পূর্ণ করে। নিঃশেষে পরম আনন্দে সেই স্বধার পাত্র থেকে তারা পান করেন। র্তারা প্রিয়তমকে জেনেছেন, প্রিয়তম তাদের জীবনে জেগেছেন। আমাদের গানে তাই আমরা ডাকছি ; প্রিয়তম হে, জাগো, জাগো, জাগো । কেন না, প্রিয়তম হে, তুমি জাগ নি বলেই মনুষ্যত্ব বিকাশ হল না, পৌরুষ পরাহত হয়ে রইল। তোমার কণ্ঠের বিজয়মাল্য দাও পরিয়ে তুমি আমাদের কণ্ঠে, জয়ী করে সংগ্রামে। সংসারের যুদ্ধে পরাভূত হতে দিয়ে না। বাচাও, তোমার অমৃতপাত্র আমার মুখে এনে দাও। অপমানের মধ্যে পরাভবের মধ্যে তোমাকে ডাকছি। জাগো, জাগো, জুগে। জাগরণের আলোকে সমস্ত দেশ উজ্জল হয়ে উঠুক। ১১ মাঘ ১৩২১, সন্ধ্যার উপদেশ