পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8లు রবীন্দ্র-রচনাবলী যে তিনি যুগ যুগান্ত ধরে অপেক্ষা করছেন। তিনি কি এই পৃথিবীর জন্তেই কত কাল ধরে অপেক্ষা করেন নি। আজ যে এই পৃথিবী এমন সুন্দরী এমন শস্যশ্বামলা হয়েছে, কত বাস্পদহনের ভিতর দিয়ে ক্রমশ শীতল হয়ে তরল হয়ে তার পরে ক্রমে ক্রমে এই পৃথিবী কঠিন হয়ে উঠেছে। তখন তার বক্ষে এমন আশ্চর্য স্যামলতা দেখা দিয়েছে। পৃথিবী যুগ যুগ ধরে তৈরি হয়েছে, কিন্তু স্বর্গ এখনও বাকি। বাষ্প-আকারে যখন পৃথিবী ছিল তখন তো এমন সৌন্দর্য ফোটে নি। আজ নীলাকাশের নীচে পৃথিবীর কী অপরূপ সৌন্দর্য দেখা দিয়েছে। ঠিক তেমনি স্বৰ্গলোক বাষ্প-আকারে আমাদের হৃদয়ের ভিতরে ভিতরে রয়েছে, তা আজও দানা বেঁধে ওঠে নি। র্তার সেই রচনাকার্যে তিনি আমাদের সঙ্গে বসে গিয়েছেন ; কিন্তু আমরা কেবল খাব, পরব, সঞ্চয় করব, এই বলে বলে সমস্ত ভূলে বসে রইলুম। তবু এ ভুল তো ভাঙবে ; মরবার আগে একদিন তো বলতে হবে, এই পৃথিবীতে এই জীবনে আমি স্বর্গের একটুখানি আভাস রেখে গেলেম। কিছু মঙ্গল রেখে গেলেম। অনেক অপরাধ স্ত,পাকার হয়েছে, অনেক সময় ব্যর্থ করেছি, তবু ক্ষণে ক্ষণে একটু সৌন্দর্য ফুটেছিল। জগৎসংসারকে কি একেবারেই বঞ্চিত করে গেলেম, অভাবকে তো কিছু পূরণ করেছি, কিছু অজ্ঞান দূর করেছি। এই কথাটি তো বলে যেতে হবে। এ দিন যাবে। এই আলো চোখের উপর মিলিয়ে যাবে। সংসার তার দরজা বন্ধ করে দেবে, তার বাইরে পড়ে থাকব। তার আগে কি বলে যেতে পারব না কিছু দিতে পেরেছি । আমাদের স্বষ্টি করবার ভার যে স্বয়ং তিনি দিয়েছেন। তিনি যে নিজে স্বন্দর হয়ে জগৎকে স্বন্দর করে সাজিয়েছেন, এ নিয়ে তো মানুষ খুশি হয়ে চুপ করে থাকতে পারল না । সে বললে, আমি ওই স্বষ্টিতে আরও কিছু স্বষ্টি করব। শিল্পী কী করে। সে কেন শিল্প রচনা করে। বিধাতা বলেছেন, আমি এই যে উৎসবের লন্ঠন সব আকাশে ঝুলিয়ে দিয়েছি, তুমি কি আল্পনা অঁাকবে না। আমার রোশনচোঁকি তো বাজছেই, তোমার তত্ব ব্রা, কি একতারাই না হয়, তুমি বাজাবে না ? সে বললে, ই, বাজাব বৈকি। গায়কের গানে আর বিশ্বের প্রাণে যেমনি মিলল অমনি ঠিক গানটি হল । আমি গান স্বষ্টি করব বলে সেই গান তিনি শোনবার জন্যে আপনি এসেছেন। তিনি খুশি হয়েছেন ; মানুষের মধ্যে তিনি যে আনন্দ দিয়েছেন, প্রেম দিয়েছেন, তা যে মিলল তার সব আনন্দের সঙ্গে— এই দেখে তিনি খুশি । শিল্পী আমাদের মানুষের সভায় কি তার শিল্প দেখাতে এসেছে। সে যে তারই সভায় তার শিল্প দেখাচ্ছে, তার গান শোনাচ্ছে।