পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ete রবীন্দ্র-রচনাবলী কছিল, “দূর করে, চিঠিখানা পুড়াইয়া ফেলি।” বলিয়া চিঠিখানি ল্যাম্পের কাছাকাছি লইয়া গেল । পুড়াইল না, আর-একবার পড়িয়া ফেলিল। পরদিন ভূত্য টেবিল হইতে কাগজপোড়া ছাই অনেক ঝাড়িয়া ফেলিয়াছিল। কিন্তু তাহা আশার চিঠির ছাই নহে, চিঠির উত্তর দিবার অনেকগুলা অসম্পূর্ণ চেষ্টাকে মহেন্দ্র পুড়াইয়া ছাই করিয়াছে । ২০ ইতিমধ্যে আরো এক চিঠি আসিয়া উপস্থিত হইল । তুমি আমার চিঠির উত্তর দিলে না ? ভালোই করিয়াছ । ঠিক কথা তো লেখা যায় না ; তোমার যা জবাব, সে আমি মনে মনে বুঝিয়া লইলাম। ভক্ত যখন তাহার দেবতাকে ডাকে, তিনি কি মুখের কথায় তাহার উত্তর দেন । দুখিনীর বিশ্বপত্রখানি চরণতলে বোধ করি স্থান পাইয়াছে। কিন্তু ভক্তের পূজা লইতে গিয়া শিবের যদি তপোভঙ্গ হয়, তবে তাহাতে রাগ করিয়ো না, হৃদয়দেব । তুমি বর দাও বা না দাও, চোখ মেলিয়া চাও বা না চাও, জানিতে পার বা না পার, পূজা না দিয়া ভক্তের আর গতি নাই। তাই আজিও এই দু-ছত্র চিঠি লিখিলাম— হে আমার পাষাণ-ঠাকুর, তুমি অবিচলিত হইয়া থাকো ”— মহেন্দ্র আবার চিঠির উত্তর লিখিতে প্রবৃত্ত হইল। কিন্তু আশাকে লিখিতে গিয়া বিনোদিনীর উত্তর কলমের মুখে আপনি আসিয়া পড়ে। ঢাকিয়া লুকাইয়া কৌশল করিয়া লিখিতে পারে না। অনেকগুলি ছিড়িয়া রাত্রের অনেক প্রহর কাটাইয়া একটা যদি বা লিখিল, সেটা লেফাফায় পুরিয়া উপরে আশার নাম লিখিবার সময় হঠাৎ তাহার পিঠে যেন কাহার চাবুক পড়িল— কে যেন বলিল, “পাষও, বিশ্বস্ত বালিকার প্রতি এমনি করিয়া প্রতারণা ?” চিঠি মহেন্দ্র সহস্র টুকরা করিয়া ছিড়িয়া ফেলিল, এবং বাকি রাতটা টেবিলের উপর দুই হাতের মধ্যে মুখ ঢাকিয়া নিজেকে যেন নিজের দৃষ্টি হইতে লুকাইবার চেষ্টা করিল। তৃতীয় পত্ৰ— যে একেবারেই অভিমান করিতে জানে না, সে কি ভালোবাসে । নিজের ভালোবাসাকে যদি অনাদর-অপমান হইতে বাচাইয়া রাখিতে না পারি, তবে সে ভালোবাসা তোমাকে দিব কেমন করিয়া । তোমার মন হয়তো ঠিক বুঝি নাই, তাই এত সাহস করিয়াছি। তাই যখন ত্যাগ করিয়া গেলে, তখনো নিজে অগ্রসর হইয়া চিঠি লিখিয়াছি ;