পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী o • לס উপর এক টুকরা কাগজ ভাঙা কাচের গেলাস দিয়া চাপা, তাহাতে লেখা—

  • আমি সন্ন্যাসী— আমার আর গাড়ির দরকার হইবে না।

ঐযুক্ত বরদানন্দস্বামী ।” মাখনবাৰু কিছুদিন কোনো খোজই করিলেন না। তিনি ভাবিলেন, বরদাকে নিজের গরজেই ফিরিতে হইবে, খাচার দরজা খোলা রাখা ছাড়া আর-কোনো আয়োজনের দরকার নাই । দরজা খোলাই রহিল, কেবল সেই কী-বইগুলার ছেড়া টুকরা সাফ হইয়া গেছে— আর-সমস্তই ঠিক আছে। ঘরের কোণে সেই জলের কুঁজার উপরে কানা-ভাঙা গেলাসটা উপুড় করা, তেলের-দাগে-মলিন চৌকিটার আসনের জায়গায় ছারপোকার উৎপাত ও জীর্ণতার ত্রুটি মোচনের জন্ত একটা পুরাতন এটুলাসের মলাট পাতা ; এক ধারে একটা শূন্ত প্যাক্‌বাক্সের উপর একটা টিনের তোরঙ্গে বরদার নাম আঁকা ; দেয়ালের গায়ে তাকের উপর একটা মলাট-ছেড়া ইংরেজি-বাংলা ডিক্সনারি, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভারতবর্ষের ইতিহাসের কতকগুলা পাতা, এবং মলাটে স্বানী ভিক্টোরিয়ার মূখ-আঁকা অনেকগুলো এক্সেসাইজ বই। এই খাতা ঝাড়িয়া দেখিলে ইহার অধিকাংশ হইতে অগডেন কোম্পানির সিগারেট-বাক্স-বাহিনী বিলাতি নটীদের মূর্তি ঝরিয়া পড়িবে। সন্ন্যাস-আশ্রয়ের সময় পথের সাত্বনার জন্য এগুলো যে বরদা সঙ্গে লয় নাই, তাহা হইতে বুঝা যাইবে, তার মন প্রকৃতিস্থ ছিল না। আমাদের নায়কের তো এই দশা ; নায়িকা ষোড়শী তখন সবেমাত্র ত্রয়োদশী । বাড়িতে শেষ পর্যন্ত সবাই তাকে খুকি বলিয়া ডাকিত, শ্বশুরবাড়িতেও সে আপনার এই চিরশৈশবের খ্যাতি লইয়া আসিয়াছিল, এইজন্য তার সামনেই বরদার চরিত্রসমালোচনায় বাড়ির দাসীগুলোর পর্যন্ত বাধিত না । শাশুড়ি ছিলেন চিররশ্ন!— কর্তার কোনো বিধানের উপরে কোনো কথা বলিবার শক্তি র্তার ছিল না, এমন-কি, মনে করিতেও তার ভয় করিত। পিস্শাশুড়ির ভাষা ছিল খুব প্রখর ; বরদাকে লইয়া তিনি খুব শক্ত শক্ত কথা খুব চোখা চোখা করিয়া বলিতেন। তার বিশেষ একটু কারণ ছিল। পিতামহদের আমল হইতে কৌলীন্তের অপদেবতার কাছে বংশের মেয়েদের বলি দেওয়া, এ বাড়ির একটা প্রথা। এই পিসি ধার ভাগে পড়িয়াছিলেন সে একটা প্রচণ্ড গাজাখোর । তার গুণের মধ্যে এই যে, সে বেশিদিন বঁাচে নাই। তাই আদর করিয়া ষোড়শীকে তিনি যখন মুক্তাহারের সঙ্গে তুলনা করিতেন তখন অন্তৰ্বামী বুঝিতেন, ব্যর্থ মুক্তাহারের জন্য যে-আক্ষেপ সে এক ষোড়শীকে লইয়া নয়। এ ক্ষেত্রে মুক্তাহারের যে বেদনাবোধ আছে, সে-কথা সকলে জুলিয়াছিল। পিলি