পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 o 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ডিবে, চিনাবাসন-কে বলি চিনেবাসন ; ডুবাই লুকাই জুড়াই-কে বলি– ডুবোই লুকোই জুড়োই ; কুলা-কে বলি কুলে, ধুলাকে বলি ধুলো ইত্যাদি। অতএব এখানে নিয়মের যে-ব্যতিক্রম দেখা যায় তাহা উচ্চারণবিধিবশত । যেখানে আদ্যক্ষরে অ্যাকার একার বা ওকণর আছে, সেখানে আবার আর একদিকে স্বরব্যত্যয় ঘটে ; নিয়মমতে, ঠ্যালাঠ্যালি না হইয়৷ ঠ্যালাঠেলি, টিপাটেপি না হইয়৷ টেপটিপি, এবং কোনাকোনি না হইয়া কোনাকুনি হয়। কিন্তু, শেষাশেষি দ্বেষাদ্বেষি রেষারেষি মেশামেশি প্রভৃতি শ-ওয়াল কথায় একারের কোনো বৈলক্ষণ্য ঘটে না। বাংলা উচ্চারণবিধির এই-সকল রহস্য আলোচনার বিষয় । আমরা শেষোক্ত তালিকাটিকে বাংলার ইঙ্গিতবাক্যের মধ্যে ভুক্ত করিলাম কেন তাহা বলা আবশ্যক। কানাকানি করিতেছে বা বলাবলি করিতেছে, বলিলে যে-সকল কথা উহ থাকে তাহ কেবল কথার ভঙ্গীতে ব্যক্ত হইতেছে। পরস্পর পরস্পরের কানে কথা বলিতেছে, বলিলে প্রকৃত ব্যাপারটাকে অর্থবিশিষ্ট কথায় ব্যক্ত করা হয়, কিন্তু কান কথাটাকে দুইবার বাকাইয়া বলিয়। একটা ইঙ্গিতে সমস্তটা সংক্ষেপে সারিয়া দেওয়া হইল । এ পর্যন্ত আমরা তিন রকমের ইঙ্গিত বাক্য পাইলাম। একটা ধ্বনিমূলক যেমন, সো সে কনকন ইত্যাদি । আর-একটা পদবিকারমূলক যেমন, খোলাখালী গোলগাল চুপচাপ ইত্যাদি। আর-একটা পদদ্বৈতমূলক যেমন, বলাবলি দলাদলি ইত্যাদি। ধ্বনিমূলক শব্দগুলি দুই রকমের ; একটা ধ্বনিদ্বৈত, আর-একটা ধ্বনিদ্বৈধ । ধ্বনিদ্বৈত যেমন, কলকল কটকট ইত্যাদি ; ধ্বনিদ্বৈধ যেমন, ফুটফাট কুপকাপ ইত্যাদি। ধ্বনিমূলক এই শব্দগুলি আমাদের ইন্দ্ৰিয়বোধ বেদনাবোধ প্রভৃতি অনুভূতি প্রকাশ করে । পদবিকারমূলক শব্দগুলি একটা নির্দিষ্ট অর্থকে কেন্দ্র করিয়া তাহার চারিদিকে অনির্দিষ্ট আভাসটুকু ফিকা করিয়া লেপিয়া দেয়। পদদ্বৈতমূলক শব্দগুলি সাধারণত অন্তোন্ত্যতা প্রকাশ করে । ধ্বনিদ্বৈধ ও পদবিকারমূলক শব্দগুলিতে আমরা এ পর্যন্ত কেবল স্বরবিকারেরই পরিচয় পাইয়াছি ; যেমন, হুসহস— হুসের সহিত যে বর্ণভেদ ঘটিয়াছে তাহ। স্বরবর্ণভেদ ; খোলাখালী প্রভৃতি শব্দ সম্বন্ধেও সেইরূপ । এবারে ব্যঞ্জনবর্ণ-বিকারের দৃষ্টান্ত লইয়া পড়িব । i প্রথমে অর্থহীন শব্দমূলক কথাগুলি দেখা যাক ; যেমন, উসখুস উস্কোখুস্কো নজগজ