পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি ©ጫ © দেখিয়াই আশা উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিল । মহেন্দ্র জোর করিয়া প্রফুল্লতা আনিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, "একলা ছাদের উপর কোন ভাগ্যবানের ভাবনায় আছ ।” আশা নায়ক-নায়িকার কথা একেবারে ভুলিয়া গিয়া কহিল, “তোমার কি শরীর আজ ভালো নাই ।” মহেন্দ্র । শরীর বেশ আছে । আশা । তবে তুমি মনে মনে কী একটা ভাবিতেছ, আমাকে খুলিয়া বলে । মহেন্দ্র আশার বাট হইতে একটা পান তুলিয়া লইয়া মুখে দিয়া কহিল, “আমি ভাবিতেছিলাম, তোমার মাসিমা বেচারা কত দিন তোমাকে দেখেন নাই । একবার হঠাৎ যদি তুমি তাহার কাছে গিয়া পড়িতে পার, তবে তিনি কত খুশিই হন ।” আশা কোনো উত্তর না করিয়া মহেন্দ্রের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল । হঠাৎ এ-কথা আবার নূতন করিয়া কেন মহেন্দ্রের মনে উদয় হইল, তাহা সে বুঝিতে পারিল না । আশাকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া মহেন্দ্ৰ কহিল, “তোমার যাইতে ইচ্ছা করে না ?” এ-কথার উত্তর দেওয়া কঠিন । মাসিকে দেখিবার জন্য যাইতে ইচ্ছা করে, আবার মহেন্দ্রকে ছাড়িয়া যাইতে ইচ্ছাও করে না। আশা কহিল, “কালেজের ছুটি পাইলে তুমি যখন যাইতে পরিবে, আমিও সঙ্গে যাইব ।” মহেন্দ্র । ছুটি পাইলেও যাইবার জো নাই ; পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে । আশা । তবে থাক, এখন না-ই গেলাম । মহেন্দ্র । থাক কেন । যাইতে চাহিয়াছিলে, যাও-না ! আশা । না, আমার যাইবার ইচ্ছা নাই । মহেন্দ্র । এই সেদিন এত ইচ্ছা ছিল, হঠাৎ ইচ্ছা চলিয়া গেল ? আশা এই কথায় চুপ করিয়া চোখ নিচু করিয়া বসিয়া রহিল। বিনোদিনীর সঙ্গে সন্ধি করিবার জন্য বাধাহীন অবসর চাহিয়া মহেন্দ্রের মন ভিতরে-ভিতরে অত্যন্ত অধীর হইয়া উঠিয়াছিল। আশাকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া তাহার একটা অকারণ রাগের সঞ্চার হইল। কহিল, “আমার উপর মনে মনে তোমার কোনো সন্দেহ জন্মিয়াছে নাকি । তাই আমাকে চোখে চোখে পাহারা দিয়া রাখিতে চাও ?” আশার স্বাভাবিক মুকুতা নম্রতা ধৈর্য মহেন্দ্রের কাছে হঠাৎ অত্যন্ত অসহ হইয়া উঠিল । মনে মনে কহিল, "মাসির কাছে যাইতে ইচ্ছা আছে, বলে যে, আমি \ֆա8Ե