পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१२ রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “মেজবউ।” বলিয়া আর তাহার কথা বাহির হইল না । তাহার দুই চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল। আশা এই দৃপ্ত দেখিয়া আর থাকিতে পারিল না— পাশের ঘরে গিয়া মাটিতে বসিয়া কাদিতে লাগিল । রাজলক্ষ্মী বা আশার কাছে অন্নপূর্ণ মহেঞ্জের সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন পাড়িতে সাহস করিলেন না। সাধুচরণকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "মামা, মহিন কোথায় ।” তখন সাধুচরণ বিনোদিনী ও মহেক্সের সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিয়া বলিলেন । অন্নপূর্ণ সাধুচরণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিহারীর কী খবর।” সাধুচরণ কহিলেন, “অনেক দিন তিনি আসেন নাই— তাহার খবর ঠিক বলিতে পারি না।” অন্নপূর্ণ কহিলেন, "একবার বিহারীর বাড়িতে গিয়া তাহার সংবাদ জানিয়া আইস ।” সাধুচরণ ফিরিয়া আসিয়া কহিলেন, “তিনি বাড়িতে নাই, বালিতে গঙ্গার ধারে বাগানে গিয়াছেন।” অন্নপূর্ণ নবীন-ডাক্তারকে ডাকিয়া” রোগীর অবস্থা জিজ্ঞাসা করিলেন । ডাক্তার কহিল, “হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতার সঙ্গে উদরী দেখা দিয়াছে, মৃত্যু অকস্মাৎ কথন আসিবে কিছুই বলা যায় না।” সন্ধ্যার সময় রাজলক্ষ্মীর রোগের কষ্ট যখন বাড়িয়া উঠিতে লাগিল, তখন অন্নপূর্ণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “দিদি, একবার নবীন-ডাক্তারকে ডাকাই ।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “না মেজবউ, নবীন-ডাক্তার আমার কিছুই করিতে পারিবে না ।” অন্নপূর্ণ কহিলেন, “তবে কাহাকে তুমি ডাকিতে চাও, বলে ।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “একবার বিহারীকে যদি খবর দাও তো ভালো হয় ।” অন্নপূর্ণার বক্ষের মধ্যে আঘাত লাগিল। সেদিন দূরপ্রবাসে সন্ধ্যাবেলায় তিনি দ্বারের বাহির হইতে অন্ধকারের মধ্যে বিহারীকে অপমানের সহিত বিদায় করিয়া দিয়াছিলেন, সেই বেদন তিনি আজ পর্যন্ত ভুলিতে পারেন নাই । বিহারী আর কখনোই তাহার স্বারে ফিরিয়া আসিবে না । ইহজীবনে আর যে কখনো সেই অনাদরের প্রতিকার করিতে অবসর পাইবেন, এ-অাশা তাহার মনে ছিল না । অন্নপূর্ণ একবার ছাদের উপর মহেক্সের ঘরে গেলেন। বাড়ির মধ্যে এই স্বরটিই ছিল আনন্দনিকেতন । আজ সে-ঘরের কোনো ঐ নাই— বিছানাপত্ৰ