পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S obr রবীন্দ্র-রচনাবলী উপসংহারে এ কথাও বলা দরকার যে, সম্প্রতি যে-দেশে বিজ্ঞানের অপ্রতিহত প্রভাবে অলজ কৌতুহলবৃত্তি দুঃশাসনমূতি ধরে সাহিত্যলক্ষ্মীর বস্ত্রহরণের অধিকার দাবি করছে, সে-দেশের সাহিত্য অন্তত বিজ্ঞানের দোহাই পেড়ে এই দৌরাত্ম্যের কৈফিয়ত দিতে পারে। কিন্তু, যে-দেশে অস্তরে-বাহিরে বুদ্ধিতে-ব্যবহারে বিজ্ঞান কোনোখানেই প্রবেশাধিকার পায় নি সে-দেশের সাহিত্যে ধার-করা নকল নির্লজ্জতাকে কার দোহাই দিয়ে চাপা দেবে । ভারতসাগরের ওপারে যদি প্রশ্ন করা ৰায় ‘তোমাদের সাহিত্যে এত হটগোল কেন, উত্তর পাই, হটগোল সাহিত্যের কল্যাণে নয়, হাটেরই কল্যাণে। হাটে ষে ঘিরেছে ? ভারতসাগরের এপারে যখন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি তখন জবাব পাই, ‘হাট ত্রিসীমানায় নেই বটে, কিন্তু হটগোল যথেষ্ট আছে । আধুনিক সাহিত্যের ঐটেই বাহাদুরি।’ `\ඊථ8 সাহিত্যে নবত্ব সকল দেশের সাহিত্যেরই প্রধান কাজ হচ্ছে শোনবার লোকের আসনটি বড়ো ক’রে তোলা, যেখান থেকে দাবি আসে। নইলে লেখবার লোকের শক্তি খাটে হয়ে যায় । যে-সব সাহিত্য বনেদি তারা বহু কালের আর বহু মামুষের কানে কথা কয়েছে । তাদের কথা দিন-আনি-দিন-খাই তহবিলের ওজনে নয়। বনেদি সাহিত্যে সেই শোনবার কান তৈরি ক’রে তোলে । যে-সমাজে অনেক পাঠকের সেই শোনবার কান তৈরি হয়েছে সে-সমাজে ৰড়ে ক’রে লেখবার শক্তি অনেক লেখকের মধ্যে আপনিই দেখা দেয়, কেবলমাত্র খুচরো মালের ব্যাবসা সেখানে চলে না । সেখানকার বড়ো মহাজনদের কারবার আধা নিয়ে নয়, পুরো নিয়ে। তাদের আধা’র ব্যাপারী বলব না, স্বতরাং জাহাজের খবর তাদের মেলে । বাংলাদেশে প্রথম ইংরেজি শিক্ষার যোগে এমন সাহিত্যের সঙ্গে আমাদের চেনাশোনা হল যার স্থান বিপুল দেশের ও নিরবধি কালের । সে সাহিত্যের ৰলবার বিষয়টা যতই বিদেশী হোক-না, তার বলবার আদর্শটা সৰ্বকালীন ও সর্বজনীন। হোমরের মহাকাব্যের কাহিনীটা গ্ৰীক, ৰিভ তার মধ্যে কাব্যরচনার বে-আদর্শটা আছে যেহেতু তা সার্বভৌমিক এইজন্তেই সাহিত্যপ্রিয় বাঙালিও সেই গ্ৰীক কাব্য পড়ে তার রস পায় । আপেল ফল আমাদের দেশের অনেক লোকের পক্ষেই অপরিচিত, ওটা সর্বাংশেই বিদেশী, কিন্তু ওর মধ্যে যে ফলত্ব আছে সেটাকে আমাদের অত্যন্ত স্বাদেশিক