পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

かふど রবীন্দ্র-রচনাবলী “বলতে ওর ক্লচবে কেন । ওকে কি তোমরা কম হেনস্তা করেছ। কাচা সাহেব • এসে প্রবীণ কেরানীকে যে-রকম গ্রাহ করে না সেইরকম আর কি।” “হলা মালীর সম্বন্ধে সত্য কথা বলতে যদি চাই তবে সেটা অপ্রিয় হয়ে উঠবে।” “আচ্ছা, আমি এই বিছানায় পড়ে থেকেই ওকে দিয়ে কাজ করাব, দেখবে দু দিনেই বাগানের চেহারা ফেরে কি না। বাগানের ম্যাপটা আমার কাছে দিয়ে । আর আমার বাগানের ডায়রিটা। আমি ম্যাপে পেনসিলের দাগ দিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে দেব ।” “আমার তাতে কোনো হাত থাকবে না ?” “না। যাবার আগে এ বাগানে সম্পূর্ণ আমারই ছাপ মেরে দেব। বলে রাখছি রাস্তার ধারের ওই বট্‌ল-পামগুলো আমি একটাও রাখব না। ওখানে ঝাউগাছের সার লাগিয়ে দেব। অমন করে মাথা নেড়ো না । হয়ে গেলে তখন দেখে। তোমাদের ওই লনট। আমি রাখব না, ওখানে মারবেলের একটা বেদি বঁধিয়ে দেব ।” “বেদিটা কি ও জায়গায় মানাবে। একটু যেন— যাকে বলে সস্তা নবাবি।” “চুপ করে। খুব মানাবে। তুমি কোনো কথা বলতে পারবে না। কিছুদিনের জন্যে এ বাগানটা হবে একলা আমার, সম্পূর্ণ আমার। তার পরে সেই আমার বাগানটা আমি তোমাকে দিয়ে যাব । ভেবেছিলে আমার শক্তি গেছে । দেখিয়ে দেব কী করতে পারি। আরও তিনজন মালী আমার চাই, আর মজুর লাগবে জন ছয়েক । মনে আছে একদিন তুমি বলেছিলে, বাগান সাজিয়ে তোলার শিক্ষা আমার হয় নি। হয়েছে কি না তার পরীক্ষা দিয়ে যাব । তোমাকে মনে রাখতেই হবে যে এ আমার বাগান, আমারই বাগান, আমার স্বত্ব কিছুতে যাবে না।” “আচ্ছ। সেই ভালো, তা হলে আমি কী করব ।” “তুমি তোমার দোকান নিয়ে থাকে ; সেখানে তোমার আপিসের কাজ তে কম নয় ।” “তোমাকে নিয়ে থাকাও তা হলে নিষিদ্ধ ?” “হা, সর্বদ কাছে থাকবার মতো সে আমি আর নেই, এখন আমি কেবল আরএকজনকে মনে করিয়েই দিতে পারি, তাতে লাভ কী ” “আচ্ছ। বেশ । যখন তুমি আমাকে সহ করতে পারবে তখনই আসব। ডেকে পাঠিয়ো আমাকে । আজ সাজিতে তোমার জন্যে গন্ধরাজ এনেছি, রেখে যাই তোমার বিছানায়, কিছু মনে কোরো না।” ব’লে আদিত্য উঠে পড়ল।