পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০৮ s রবীন্দ্র-রচনাবলী পোড়া অদৃষ্ট এমনি, ভালোবাসা বল যা বল সবই জুটল, কেবল বিধির বিপাকে একটু ব্যাকরণের ভুল হয়েই সব মাটি করে দিয়েছে । চন্দ্রকান্ত । কেবল একটা দীর্ঘ ঈর জন্যে । নলিনাক্ষ না হয়ে যদি নলিনাক্ষী হত । হায় হায় ! কিন্তু তা হলে এই মিনসে চন্দ্রবিন্দুটাকে লোপ করে দেবার জায়গা পেতে না । নিমাইয়ের প্রবেশ নিমাই । কী হচ্ছে । বিনোদবিহারী । যা রোজ হয় তাই হচ্ছে । নিমাই । সেটিমেণ্টাল আলোচনা ! তোমাদের আচ্ছা এক কাজ হয়েছে যা হোক। ওটা একটা শারীরিক ব্যামো তা জান ? বেশ ভালো করে আহারটি করলে এবং সেটি হজম করতে পারলে কবিত্বরোগ কাছে ঘেঁষতে পারে না । আর আাধপেটা করে খাও, আর অম্বলের ব্যামোটি বাধাও, আর আমনি কোথায় আকাশের চাদ, কোথায় দক্ষিণের বাতাস, কোথায় কোকিল পক্ষীর ডাক, এই নিয়ে ভারি মাথাব্যথা পড়ে যায়– জানালার কাছে বসে বসে মনে হয় কী যেন চাই— যা চাও সেটি যে হচ্ছে বাইকার্বোনেট অফ সোডা তা কিছুতেই বুঝতে পার না । বিনোদবিহারী । তা যদি বল তা হলে জীবনটাই তো একটা প্রধান রোগ, এবং সকল রোগের গোড়া। জড়পদার্থ কেমন সুস্থ আছে— মাঝের থেকে হঠাৎ প্রাণ নামক একটা ব্যাধি জুটে প্রাণীগুলোকে খেপিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে । বাতাসে একটা ঢেউ উঠল অমনি কানের মধ্যে ভো করে উঠল, ঈথর একটু নড়ে উঠল অমনি চোখের মধ্যে চিকমিক করতে লাগল, সক্কালবেলায় উঠেই পেটের মধ্যে চো চো করতে আরম্ভ করেছে— এ কি কখনো স্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে । স্বাভাবিক যদি বলতে চাও সে কেবল কাঠ পাথর মাটি— নিমাই । আরে, অতটা দূর গেলে তো কথাই নেই। কিন্তু তোমরা ওই যে যাকে ভালোবাসা বল সেটা যে শুদ্ধ একটা স্বায়ুর ব্যামো তার আর সন্দেহ নেই। আমার বিশ্বাস অন্যান্ত ব্যামোর মতো তারও একটা ওষুধ বের হবে। বালকবালিকাদের যেমন হাম হয়, যুবকযুবতীদের তেমনি ওই একটা স্বায়ুর উৎপাত ঘটে, কারো বা খুব উৎকট, কারো বা একটু মৃদু রকমের । যখন ও রোগটা চিকিৎসা-শাস্ত্রের অধীনে আসবে তখন লক্ষণ মিলিয়ে ওষুধ ঠিক করতে হবে— ডাক্তার রোগীকে জিজ্ঞাসা করবে,— “আচ্ছা, তাকে কি তোমার সর্বদাই মনে পড়ে । তার কাছে থাকলে