পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 о о রবীন্দ্র-রচনাবলী আছে। জোড়াশকে একটা কালব্যাপকত্বের ভাব আছে। ধুধু করিতেছে ধবধৰ করিতেছে, বলিতে অনেকক্ষণ ধরিয়া একটা ক্রিয়ার ব্যাপকত্ব বোঝায় । যেখানে ক্ষণিকতা বোঝায় সেখানে জোড়া কথার চল নাই ; যেমন, ধা করিয়া, সঁা করিয়া ইত্যাদি । যখন ধী ধাঁ, সঁ। সঁ, বলা যায় তখন ক্রিয়ার পুনরাবর্তন বুঝায়। ‘এ’ প্রত্যয় যোগ করিয়া এই-জাতীয় শব্দগুলি হইতে বিশেষণ তৈরি হইয়া থাকে ; যেমন, ধৰ্ব ধবে টক্‌টকে ইত্যাদি। টকটক ঠকঠক প্রভৃতি কয়েকটি ধ্বন্যাত্মক শব্দের মাঝখানে আকার যোগ করিয়া উহারই মধ্যে একটুখানি অর্থের বিশেষত্ব ঘটানো হইয়া থাকে ; যেমন, কচকচ কটকট কড়াক্কড় কপাকপ খচখচ খটখট খপাখপ গপগপ ঝনাজছন টকাটক টপাটপ ঠকাঠক ধড়াধবড় ধপাধপ, ধমাধবম পটাপট ফসফিস । কপকপ এবং কপাকপ, ফসফস এবং ফসফিস, টপটপ এবং টপাটপ শব্দের মধ্যে কেবলমাত্র আকারযোগে অর্থের যে সূক্ষ্ম বৈলক্ষণ্য হইয়াছে, তাহা কোনো বিদেশীকে অর্থবিশিষ্ট ভাষার সাহায্যে বোঝানো শক্ত। ঠকাঠক বলিলে এই বুঝায় যে, একবার ঠক করিয়া তাহার পরে বলসঞ্চয়পূর্বক পুনর্বার দ্বিতীয়বার ঠক করা ; মাঝখানের সেই উদ্যত অবস্থার যতিটুকু আকার যোগে আপনাকে প্রকাশ করে। এইরূপে বাংলা ভাষা যেন অ আ ই উ স্বরবর্ণ কয়টাকে লইয়া সুরের মতো ব্যবহার করিয়াছে। সেস্থর যাহার কানে অভ্যস্ত হইয়াছে সে-ই তাহার স্বক্ষতম মর্মটুকু বুঝিতে পারে। উল্লিখিত উদাহরণগুলিতে লক্ষ করিবার বিষয় আর-একটি আছে । আদ্যক্ষরে নে আকার অাছে সেইখানে পরবর্তী অক্ষরে আকার-যোজন চলে, অন্যত্র নহে। যেমন টকটক হইতে টকাটক হইয়াছে, কিন্তু টিকটিক হইতে টিকাটিক বা ঠকঠক হইতে ঠকাঠক হয় না। এইরূপে মনোযোগ করিলে দেখা যাইবে, বাংলাভাষার উচ্চারণে স্বরবর্ণগুলির কতকগুলি কঠিন বিধি আছে। স্বরবর্ণ আকারকে আবার আর-এক জায়গায় প্রয়োগ করিলে আর-এক রকমের স্বর বাহির হয় ; তাহার দৃষ্টান্ত, টুকটাক ঠকঠাক খুটখাট ভূটভাট দুড়দাড় কুপকাপ গুপগাপ ঝুপঝাপ টুপটাপ ধুপধাপ হুপহপ দুমদাম ধুমধাম ফুসফাস হুসহস । এই শব্দগুলি দুই প্রকারের ধ্বনিব্যঞ্জন করে, একটি অস্ফুট আর-একটি স্ফুট । যখন বলি, টুপটাপ করিয়া বৃষ্টি পড়িতেছে তখন এই বুঝায় যে, ছোটো ফোটাটি টুপ করিয়া এবং বড়ে ফোটাটি টপ করিয়া পড়িতেছে, ঠকঠাক শব্দের অর্থ একটা শব ছোটো আর-একটা বড়ো। উকারে অব্যক্তপ্রায় প্রকাশ, আকারে পরিস্ফুট প্রকাশ । י যেখ