পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ २8¢ কি কখনও পিতামাতা ভ্রাতাভগ্নী পুত্ৰকলত্রের মধ্যে এসে পড়ে নখদন্ত বিকাশ করতে পারে। যখন কেবল আপনার সম্পদের বোঝাটি আপনার মাথায় তুলে নিয়ে গৃহত্যাগী সার্থবাহী সংসারপথ দিয়ে একলা চলে তখনই সন্ধ্যাবেলায় এই শ্বাপদগুলো এক লম্ফে স্কন্ধে এসে পড়বার সুযোগ অন্বেষণ করে । যা হোক, আমার মতো অভাজন লোকের পক্ষে য়ুরোপীয় সভ্যতার পরিণাম অন্বেষণের চেষ্টা অনেকটা আদার ব্যাপারীর জাহাজের তত্ত্ব নেওয়ার মতো হয়। তবে একটা নিৰ্ভয়ের কথা এই যে, আমি যে-কোনো অনুমানই ব্যক্ত করি না কেন, তার সত্য মিথ্যা পরীক্ষার এত বিলম্ব আছে যে, ততদিনে আমি এখানকার দণ্ড-পুরস্কারের হাত এড়িয়ে বিস্মৃতিরাজ্যে অজ্ঞাতবাস গ্রহণ করব। অতএব এ-সকল কথা যিনি যেভাবেই নিন আমি তার জবাবদিহি করতে চাই না। কিন্তু যুরোপের স্ত্রীলোক সম্বন্ধে যে-কথাটা বলছিলুম সেটা নিতাস্ত অবজ্ঞার যোগ্য বলে আমার বোধ হয় না। যে-দেশে গৃহ নষ্ট হয়ে ক্রমে হোটেল বৃদ্ধি হচ্ছে ; যে-যার নিজে নিজে উপার্জন করছে এবং আপনার ঘরটি, easy chair-টি, কুকুরটি, ঘোড়াটি, বন্দুকটি, চুরটের পাইপটি, এবং জুয়াখেলার ক্লাবটি নিয়ে নির্বিঘ্নে আরামের চেষ্টায় প্রবৃত্ত আছে সেখানে নিশ্চয়ই মেয়েদের মৌচাক ভেঙে গেছে। পূর্বে সেবক-মক্ষিকারা মধু অন্বেষণ ক’রে চাকে সঞ্চয় করত এবং রাজ্ঞী-মক্ষিকার কর্তৃত্ব করতেন, এখন স্বার্থপরগণ যে-যার নিজের নিজের চাক ভাড়া ক’রে সকালে মধু উপার্জনপূর্বক সন্ধ্যা পর্যন্ত একাকী নিঃশেষে উপভোগ করছে। সুতরাং রানী-মক্ষিকাদের এখন বেরোতে হচ্ছে, কেবলমাত্র মধুদান এবং মধুপান করবার আর সময় নেই। বর্তমান অবস্থা এখনও তাদের স্বাভাবিক হয়ে যায় নি ; এইজন্যে অনেকটা পরিমাণে অসহায়ভাবে তারা ইতস্তত ভন ভন করে বেড়াচ্ছেন। আমরা আমাদের মহারানীদের রাজত্বে বেশ অাছি এবং তারাও আমাদের অন্তঃপুর অর্থাৎ আমাদের পারিবারিক সমাজের মর্মস্থানটি অধিকার করে সকল কটিকে নিয়ে বেশ সুখে আছেন । কিন্তু সম্প্রতি সমাজের নানা বিষয়ে অবস্থান্তর ঘটছে। দেশের আর্থিক অবস্থার এমন পরিবর্তন হয়েছে যে, জীবনযাত্রার প্রণালী স্বতই ভিন্ন অণকার ধারণ করছে এবং সেই সূত্রে আমাদের একান্নবর্তী পরিবার কালক্রমে কথঞ্চিৎ বিশ্লিষ্ট হবার মতো বোধ হচ্ছে। সেইসঙ্গে ক্রমশ আমাদের স্ত্রীলোকদের অবস্থাপরিবর্তন আবশ্বক এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে। কেবলমাত্র গৃহলুষ্ঠিত কোমল হৃদয়রাশি হয়ে থাকলে চলবে না, মেরুদণ্ডের উপর ভর করে উন্নত উৎসাহী ভাবে স্বামীর পাশ্বচারিণী হতে হবে। অতএব স্ত্রীশিক্ষা প্রচলিত না হলে বর্তমান শিক্ষিতসমাজে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে > २{S १