পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 রবীন্দ্র-রচনাবলী জানি ইংরেজ পত্নীর সহায়তায় তাহা সম্পন্ন হয়। কেবল তাহাই নহে, শুনিয়াছি সাংসারিক কার্য ছাড়া অন্তান্ত মহৎ বা ক্ষুদ্র কার্ষেও ইংরেজ স্ত্রী স্বামীর সহায়তা করিয়া থাকেন। লেখকের স্ত্রী স্বামীর কেরানীগিরি করেন, প্রফ-সংশোধন করেন, এবং অনেক সময় তদপেক্ষ গুরুতর সাহায্য করিয়া থাকেন। পাদ্রির স্ত্রী পল্লীর দরিদ্র রুগণ শোকাতুর ও দুষ্কর্মকারীদের সাহায্য সেবা সাত্ত্বনা ও উপদেশ দান করিয়া স্বামীর পৌরোহিত্য কার্যের অনেক সাহায্য করিয়া থাকেন। যিনি দরিদ্রের দুঃখমোচন বা অমুস্থের স্বাস্থ্যবিধান প্রভৃতি কোনো লোকহিতকর ব্রত গ্রহণ করিয়াছেন তাহার স্ত্রীও তাহাকে কায়মনে সাহায্য করে । চন্দ্রনাথবাবু জিজ্ঞাসা করিবেন, যদি না করে ? আমার উত্তর, হিন্দু স্ত্রী যদি সমস্ত গার্হস্থ্য ধর্ম না পালন করে ? সে যদি দুষ্টস্বভাব বা আলস্তবশত শাশুড়ির সহিত ঝগড়া করে ও সঘনে হাতনাড়া দিয়া কঠিন পণ করিয়া বসে, আমি অমুক গৃহকাজটা করিতে পারিব না, তবে কী হয়। তবে হয় তাহাকে বলপূর্বক সে-কাজে প্রবৃত্ত করানো হয়, নয় বধূর এই বিদ্রোহ পরিবারকে নীরবে সহ করিতে হয় । ইংলণ্ডেও সম্ভবত তাহাই ঘটে । যদি ইংরেজ, স্ত্রী তাহার অসহায় স্বামীকে বলিয়া বসে তোমার নিমন্ত্রিত অতিথিদের জন্ত পাকাদির ব্যবস্থা অামি করিতে পারিব না, তবে হয় স্বামী বলপ্রকাশ বা ভয়প্রদর্শন করে, নয় ভালেমানুষটির মতো আর কোনো বন্দোবস্ত করে । চন্দ্রনাথবাবু বলিবেন, হিন্দু স্ত্রী এমনভাবে শিক্ষিত ও পালিত হয় যে বিদ্রোহী হইবার সম্ভাবনা তাহার পক্ষে অল্প ; অপর পক্ষে তেমনই বলা যায়, ইংরেজ স্ত্রী যেরূপ শিক্ষা ও স্বাধীনতায় পালিত, তাহাতে সাংসারিক কার্য ছাড়া মহৎ স্বামীর অন্ত কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে সহায়তা করিতে সে অধিকতর সক্ষম । কতকগুলি কাজ যন্ত্রের দ্বারা সাধিত হয়, এবং কতকগুলি কাজ স্বাধীন ইচ্ছার বল ব্যতীত সাধিত হইতে পারে না । রন্ধন ও শুশ্রুষাদি শাশুড়ি-ননদের নিত্য সেবা এবং গৃহ-কর্মের অনুষ্ঠানে সাহায্য করা, আশৈশব অভ্যাসে প্রায় সকলেরই দ্বারা স্বচারুরূপে সাধিত হইতে পারে। কিন্তু জন স্টয়ার্ট মিল যেরূপ স্ত্রীর সাহচর্য লাভ করিয়াছিলেন সেরূপ স্ত্রী জাতায় পিষিয়া প্রস্তুত হইতে পারে না । হার্মোদিয়াস এবং এরিস্টজিটন, যিশুখৃষ্ট এবং সেন্ট পল, চৈতন্য এবং নিত্যানন্দ, রাম এবং লক্ষ্মণের যে মহৎ উদ্দেশুজাত বিবাহ তাহা জাতায়-পেষা বিবাহ নহে, তাহা স্বতসিদ্ধ বিবাহ । কেহ না মনে করেন আমি জাতায়-পেষা বিবাহের নিন্দা করিতেছি, অনেকের পক্ষে তাহার আবশ্বক আছে ; তাই বলিয়া যিনি একমাত্র সেই বিবাহের মহিমা কীর্তন করিয়া অন্ত সমস্ত বিবাহের নিন্দ করেন তাহার সহিত আমি একমত হইতে পারি না। সর্বত্রই পুরুষ বলিষ্ঠ, অনেক