পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ 8२¢ আমাদের দেশে বিবাহিত পুরুষদের মধ্যে দাম্পত্যনীতি সম্বন্ধে যথেচ্ছাচার যে যথেষ্ট প্রচলিত আছে তাহা বোধ করি কাহাকেও বলিতে হইবে না। বৃদ্ধ লোকেরা অবগত আছেন, কিছুকাল পূর্বে অন্যান্ত নানা আয়োজনের মধ্যে বেস্তা রাখাও বড়োমামুষির এক অঙ্গ ছিল । এখনও দেখা যায় দেশের অনেক খ্যাতনামা লোক প্রকাশ্বে রাজপথে গাড়ি করিয়া বেখা লইয়া যাইতে এবং ধুমধাম করিয়া বেতা প্রতিপালন করিতে কিছুমাত্র সংকোচ বোধ করেন না এবং সমাজও সে-বিষয়ে র্তাহাদিগকে লাঞ্ছনা করে না। সমাজের অনেক তুচ্ছ নিয়মটুকু লঙ্ঘন করিলে যেদায়ে পড়িতে হয় ইহাতে ততটুকু দায়ও নাই। অতএব ডিভোর্স প্রথা আমাদের মধ্যে প্রচলিত নাই বলিয়াই ইহা বলা যায় না যে, আমাদের দেশে বিবাহের পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিক একীকরণত রক্ষার প্রতি সমাজের বিশেষ মনোযোগ আছে। যাহা হউক আমার বক্তব্য এই যে, হিন্দুবিবাহের যথার্থ যাহা মর্ম ইতিহাস হইতে তাহা প্রমাণ না করিয়া যদি ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে আপন মনের মতো এক নৃতন আদর্শ গড়িয়া তাহাকে পুরাতন বলিয়া প্রচার করিতে চেষ্টা করি, তবে সত্যপথ হইতে ভ্ৰষ্ট হইতে হয়। আমরা ইংরেজি শিক্ষা হইতে অনেক sentiment প্রাপ্ত হইয়াছি ( sentiment শব্দের বাংলা আমার মনে আসিতেছে না) অনেক দেশানুরাগী ব্যক্তি সেইগুলিকে দেশীয় ও প্রাচীন বলিয়া প্রমাণ করিবার জন্য বিশেষ উৎসুক হইয়াছেন, এবং তাহারা বিরোধী পক্ষকে বিজাতীয় শিক্ষায় বিকৃতমস্তিক বলিয়৷ Èolzfri ft TR I corsai sentiment Rtz, atzīt Evolution, Natural Selection, Magnetism প্রভৃতি নব্য বিজ্ঞানতন্ত্ৰসকলও প্রাচীন ঋষিদের জটাজালের মধ্য হইতে সূক্ষ্মদৃষ্টিতে বাছিয়া বাহির করিতেছেন। কিন্তু সাপুড়ে অনেক সময়ে নিরীহ দর্শকের ক্ষুদ্র নাসাবিবর হইতে একটা বৃহৎ সাপ বাহির করে বলিয়াই যে উক্ত নাসাবিবর যথার্থ সেই সাপের আশ্রয়স্থল বলিয়া বিশ্বাস করিতে হইবে এমন নহে । সাপ তাহার বৃহৎ ঝুলিটার মধ্যেই ছিল । sentiment-সকলও আমাদের ঝুলিটার মধ্যেই আছে, আমরা নানা কৌশলে ও অনেক বাশি বাজাইয়া সেগুলি পুথির মধ্য হইতেই যেন বাহির করিলাম এইরূপ অন্তকে এবং আপনাকে বুঝাইতেছি। হিন্দুবিবাহের মধ্যে আমরা যতটা sentiment পুরিয়াছি তাহার কতটা Comte-র, কতটা ইংরেজি কাব্যসাহিত্যের, কতটা খৃষ্টধর্মের ‘স্বৰ্গীয় পবিত্রতা’ নামক শব্দ ও ভাব বিশেষের এবং কতটা প্রাচীন হিন্দুর এবং কতটা আধুনিক আচারের, তাহা বলা দুঃসাধ্য। সাংসারিকতাকে প্রাচীন হিন্দুরা হেয়ঞ্জান করিতেন না, কিন্তু খৃষ্টানেরা করেন। অতএব, পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভাৰ্য –এ কথা স্বীকার করা