পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wවීම් ෆ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি বললুম, “আজ আমাদের সভার কাজ হওয়া অসম্ভব ।” সে বললে, “তোমাদের সভা না হয় না হবে, অtজ আমার নিমন্ত্রণ ।” আমি মনে একটু আরাম পেলুম। ভাবলুম, অনিলের শোকটা তত বেশি কিছু নয়। মনে করলুম, সেই-যে এক সময়ে ওর সঙ্গে বড়ো বড়ো বিষয়ে কথা কইতুম তারই ফলে ওর মনটা অনেকটা নিরাসক্ত হয়ে এসেছে। যদিচ সব কথা বোঝবার মতো শিক্ষা এবং শক্তি ওর ছিল না, কিন্তু তবু পাসের্ণনাল ম্যাগ নেটিজম বলে একটা জিনিস আছে তো । সন্ধ্যায় সময় আমার দ্বৈতদলের দুই-চারজন কম পড়ে গেল । কানাই তো এলই না। পয়লা-নম্বরে যারা টেনিসের দলে যোগ দিয়েছিল তারা ও কেউ আসে নি । শুনলুম, কাল ভোরের গাড়িতে লিতাংশুমেীলা চলে যাচ্ছে, তাই এরা সেখানে বিদায়ভোজ খেতে গেছে। এ দিকে আনিলা আজ যেরকম ভোজের আয়োজন করেছিল এমন আর কোনো দিনই করে নি। এমন-কি, আমার মতো বেহিসাবি লোকেও এ কথা না মনে করে থাকতে পারে নি যে, খরচটা অতিরিক্ত করা হয়েছে। সেদিন খাওয়াদাওয়া করে সভাভঙ্গ হতে রাত্রি একটা-দেড়টা হয়ে গেল । আমি ক্লাস্ত হয়ে তখনি শুতে গেলুম। অনিলাকে জিজ্ঞাসা করলুম “শোবে না ?” সে বললে “বাসনগুলো তুলতে হবে।” পরের দিন যখন উঠলুম তখন বেল প্রায় আটটা হবে । শোবার ঘরে টিপাইয়ের উপর যেখানে আমার চশমাটা খুলে রাখি সেখানে দেখি, আমার চশমা চাপা দেওয়া এক-টুকরা কাগজ, তাতে অনিলের হাতের লেখাটি আছে ‘আমি চললুম। আমাকে খুঁজতে চেষ্টা কোরো না। করলেও খুজে পাবে না।’ কিছু বুঝতে পারলুম না। টিপাইয়ের উপরে একটা টিনের বাক্স– সেটা খুলে দেপি, তার মধ্যে অনিলার সমস্ত গয়ন— এমন-কি, তার হাতের চুড়ি বাল পর্যন্ত, কেবল তার শাখা এবং হাতের লোহা ছাড়া। একটা খোপের মধ্যে চাবির গোছা, অন্য অন্য থোপে কাগজের মোড়কে-করা কিছু টাকা সিকি দুয়ানি। অর্থাৎ, মাসের খরচ বঁচিয়ে অনিলের হাতে ষ কিছু জমেছিল তার শেষ পয়সাটি পর্যস্ত রেখে গেছে । একটি খাতায় বাসন-কোসন জিনিসপত্রের ফর্দ, এবং ধোবার বাড়িতে যে-সব কাপড় গেছে তার সব হিসাব । এই সঙ্গে গয়লাবাড়ির এবং মুদির দোকানের দেনার হিসাবও টোকা আছে, কেবল তার নিজের ঠিকানা নেই। এইটুকু বুঝতে পারলুম, অনিল চলে গেছে। সমস্ত ঘর তন্ন তন্ন করে দেখলুম— আমার শ্বশুরবাড়িতে খোজ নিলুম— কোথাও সে নেই। কোনো একটা বিশেষ ঘটনা