পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిe S রবীন্দ্র-রচনাবলী রাইচরণ কহিল, ‘এমন কাজের প্রমাণ কী করিয়া, থাকিবে । আমি যে তোমার ছেলে চুরি করিয়াছিলাম সে কেবল ভগবান জানেন, পৃথিবীতে আর কেহ জানে না ।” অমুকুল ভাবিয়া স্থির করিলেন যে, ছেলেটিকে পাইবামাত্র তাহার স্ত্রী যেরূপ আগ্রহের সহিত তাহাকে আগলাইয়া ধরিয়াছেন এখন প্রমাণসংগ্রহের চেষ্টা করা স্বযুক্তি নহে; যেমনই হউক, বিশ্বাস করাই ভালো। তা ছাড়া, রাইচরণ এমন ছেলেই বা কোথায় পাইবে। এবং বৃদ্ধ তৃত্য র্তাহাকে অকারণে প্রতারণাই বা কেন করিবে । ছেলেটির সহিতও কথোপকথন করিয়া জানিলেন যে সে শিশুকাল হইতে রাইচরণের সহিত আছে এবং রাইচরণকে সে পিতা বলিয়া জানিত, কিন্তু রাইচরণ কখনো তাহার প্রতি পিতার ন্যায় ব্যবহার করে নাই, অনেকটা ভূত্যের ভাব ছিল। অনুকুল মন হইতে সন্দেহ দূর করিয়া বলিলেন, কিন্তু রাইচরণ, তুই আর আমাদের ছায়া মাড়াইতে পাইবি না।’ রাইচরণ করজোড়ে গদগদ কণ্ঠে বলিল, ‘প্রতু, বৃদ্ধবয়সে কোথায় যাইব । কত্ৰী বলিলেন, ‘আহ থাক। আমার বাছার কল্যাণ হউক । ওকে আমি মাপ করিলাম।” ন্যায়পরায়ণ অনুকুল কহিলেন, যে কাজ করিয়াছে উহাকে মাপ করা যায় না।’ রাইচরণ অমুকুলের পা জড়াইয়া কহিল, ‘আমি করি নাই, ঈশ্বর করিয়াছেন। নিজের পাপ ঈশ্বরের স্বন্ধে চাপাইবার চেষ্টা দেখিয়া অনুকূল আরও বিরক্ত হইয়া কহিলেন, যে এমন বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করিয়াছে তাহাকে আর বিশ্বাস করা কর্তব্য নয় ? রাইচরণ প্রভুর পা ছাড়িয়া কহিল, সে আমি নয় প্রভু ’ ‘তবে কে ? ‘আমার অদৃষ্ট।’ কিন্তু, এরূপ কৈফিয়তে কোনো শিক্ষিত লোকের সস্তোষ হইতে পারে না । রাইচরণ বলিল, পৃথিবীতে আমার আর-কেহ নাই।’ יל ফেলন যখন দেখিল সে মুসেফের সন্তান, রাইচরণ তাহাকে এত দিন চুরি করিয়া নিজের ছেলে বলিয়া অপমানিত করিয়াছে, তখন তাহার মনে মনে কিছু রাগ হইল। কিন্তু, তথাপি উদারভাবে পিতাকে বলিল, “বাবা, উহাকে মাপ করে। বাড়িতে থাকিতে না দাও, উহার মাসিক কিছু টাকা বরাদ্দ করিয়া দাও। :