পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ వ&వి আমার হঠাৎ এমন ধর্মে মন হয়েছে দেখে তোমরা এত খুশি হয়ে উঠলে যে, কিছুমাত্র আপত্তি করলে না। এ কথাও মনে ছিল যে, এখন যদি কলকাতায় থাকি । তবে আবার কোন দিন বিন্দুকে নিয়ে ফ্যাসাদ বাধিয়ে বসব । আমাকে নিয়ে বিষম ল্যাঠা । বুধবারে আমাদের যাবার দিন, রবিবারে সমস্ত ঠিক হল। আমি শরংকে ডেকে বললুম, “ধেমন করে হোক, বিন্দুকে বুধবারে পুরী ধাবার গাড়িতে তোকে তুলে দিতে হবে ।” শরতের মুখ প্রফুল্ল হয়ে উঠল ; সে বললে, “ভয় নেই, দিদি, আমি তাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে পুরী পর্যন্ত চলে যাব- ফাকি দিয়ে জগন্নাথ দেখা হয়ে যাবে।” সেইদিন সন্ধ্যার সময় শরং আবার এল। তার মুখ দেখেই আমার বুক দমে গেল। আমি বললুম ‘কী, শরং ? সুবিধা হল না বুঝি ?” সে বললে, “না।” আমি বললুম, “রাজি করতে পারলি নে ?” সে বললে, “আর দরকার ও নেই । কাল রাত্তিরে সে কাপড়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করে মরেছে। বাড়ির যে ভাইপোটার সঙ্গে ভাব করে নিয়েছিলুম, তার কাছে খবর পেলুম, তোমার নামে সে একটা চিঠি রেখে গিয়েছিল, কিন্তু সে চিঠি ওরা নষ্ট করেছে।” যাক, শাস্তি হল । দেশস্থদ্ধ লোক চটে উঠল । বলতে লাগল, “মেয়েদের কাপড়ে আগুন লাগিয়ে মরা একটা ফ্যাশান হয়েছে।” তোমরা বললে, “এ সমস্ত নাটক করা ।” তা হবে । কিন্তু নাটকের তামাসাটা কেবল বাঙালি মেয়েদের শাড়ির উপর দিয়েই হয় কেন, আর বাঙালি বীরপুরুষদের ক্টোচার উপর দিয়ে হয় না কেন, সেটাও তো ভেবে দেখা উচিত । বিন্দিটার এমনি পোড় কপাল বটে ! যতদিন বেঁচে ছিল রূপে গুণে কোনো স্বশ পায় নি— মরবার বেলাও যে একটু ভেবে চিন্তে এমন একটা নতুন ধরনে মরবে যাতে দেশের পুরুষরা খুশি হয়ে হাততালি দেবে তাও তার ঘটে এল না। মরেও লোকদের চটিয়ে দিলে ! দিদি ঘরের মধ্যে লুকিয়ে কাদলেন। কিন্তু সে কান্নার মধ্যে একটা সাম্বন ছিল। যাই হোকৃ-না কেন, তবু রক্ষা হয়েছে, মরেছে বই তো না! বেঁচে থাকলে কী না হতে পারত ।