পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যের পথে ৪২১ ঠুলির সঙ্গে সঙ্গে সে এমন একটা পথ খুলে দেয় যাতে ক’রে সরোবর নানা দৃষ্টিতে নানা খেয়ালে নানাবিধ হয়ে ওঠে। সাধু বিচারবুদ্ধি তাকে বলে, ‘ধিক্ । আমরা যখন ইংরেজি কাব্য পড়া শুরু করলুম তখন সেই আচার-ভাঙা ব্যক্তিগত মঞ্জিকেই সাহিত্য স্বীকার ক’রে নিয়েছিল। এডিনবরা রিভিয়ুতে বে-তর্জনধ্বনি উঠেছিল সেটা তখন শান্ত। ৰাই হোক, আমাদের সেকাল আধুনিকতার একট। যুগান্তকাল । তখনকার কালে কাব্যে আধুনিকতার লক্ষণ হচ্ছে ব্যক্তিগত খুশির দৌড়। ওয়ার্ড বার্থ বিশ্বপ্রকৃতিতে যে আনন্দময় সত্তা উপলব্ধি করেছিলেন সেটাকে প্রকাশ করেছিলেন নিজের ছাদে। শেলির ছিল প্ল্যাটোনিক ভাবুকত, তার সঙ্গে রাষ্ট্রগত ধর্মগত সকলপ্রকার স্থল বাধার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। রূপসৌন্দর্বের ধ্যান ও স্বষ্টি নিয়ে কাঁটুলের কাব্য। ঐ যুগে বাহিকতা থেকে আস্তরিকতার দিৰে কাব্যের স্রোত বাৰ ফিরিয়েছিল । কবিচিত্তে ধে-অনুভূতি গভীর, ভাষায় মুন্দর রূপ নিয়ে সে আপন নিত্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় । প্রেম আপনাকে সজ্জিত করে । অস্তরে তার বে-আনন্দ বাইরে সেটাকে সে প্রমাণ করতে চায় সৌন্দর্ষে । মানুষের একটা কাল গেছে যখন সে অবসর নিয়ে নিজের সম্পৰ্কীয় জগৎটাকে নানারকম করে সাজিয়ে তুলত। বাইরের সেই সজাই তার ভিতরের অম্বুরাগের প্রকাশ। যেখানে.অস্থরাগ সেখানে উপেক্ষা থাকতে পারে না । সেই যুগে নিত্যব্যবহার্ষ জিনিসগুলিকে মানুষ নিজের রুচির আনন্দে বিচিত্র করে তুলেছে। অন্তরের প্রেরণা তার আঙুলগুলিকে স্বষ্টিকুশলী করেছিল। তখন দেশে দেশে গ্রামে গ্রামে ঘটিবাটি গৃহসজ্জা দেহসজ্জা রঙে রূপে মাছুষের হৃদয়কে জড়িয়ে দিয়েছিল তার বহিরুপকরণে। মানুষ কত অনুষ্ঠান স্থষ্টি করেছিল জীবনযাত্রাকে রস দেবার জন্তে । কত নূতন নূতন স্বর ; কাঠে ধাতুতে মাটিতে পাথরে রেশমে পশমে তুলোয় কত নূতন নূতন শিল্পকলা। সেই যুগে স্বামী তার স্ত্রীর পরিচয় দিয়েছে, প্রিয়শিয়াললিতে কলাবিধে । ষে দাম্পত্যসংসার রচনা করত তার রচনাকার্ষের জন্ত ব্যাঙ্কে-জমানে টাকাটাই প্রধান জিনিস ছিল না, তার চেয়ে প্রয়োজন ছিল ললিতকলার। যেমন-তেমন ক'রে মালা গাখলে চলত না ; চীনাংশুকের অঞ্চলপ্রান্তে চিত্রবয়ন জানত তরুণীরা ; নাচের নিপুণতা ছিল প্রধান শিক্ষণ; তার সঙ্গে ছিল বীণা বেণু, ছিল গান। মানুষে মানুষে যে-সম্বন্ধ সেটার মধ্যে আত্মিকতার সৌন্দর্য ছিল। প্রথম বয়সে ষে ইংরেজ কবিদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হল তারা বাহিরকে নিজের অন্তরের যোগে দেখছিলেন ; জগৎট হয়েছিল তাদের নিজের ব্যক্তিগত । আপন কল্পনা মত ও রুচি সেই বিশ্বকে শুধু যে কেবল মানবিক ও মানসিক করেছিল তা নয়,