পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

कडूब्रज 8*> আড়ালে আসিয়া দামিনী আমাকে বলিল, সে হয় না। একলা ফিরিবেন, উহার । দেখাশুনা করিবে কে ? সেই-যে একবার একলা বাহির হইয়াছিলেন, কী চেহারা লইয়া ফিরিয়াছিলেন সে কথা মনে করিলে আমার ভয় হয়। সত্য কথা বলিব ? দামিনীর এই উদবেগে আমার মনে যেন একটা রাগের ভিমরুল হুল ফুটাইয়া দিল, জালা করিতে লাগিল। জ্যাঠামশায়ের মৃত্যুর পর শচীশ তো প্রায় দু বছর একলা ফিরিয়াছিল, মারা তো পড়ে নাই। মনের ভাব চাপা রহিল না, একটু ঝাজের সঙ্গেই বলিয়া ফেলিলাম। দামিনী বলিল, শ্ৰীবিলাসবাবু, মানুষের মরিতে অনেক সময় লাগে সে আমি জানি। কিন্তু একটুও দুঃখ পাইতে দিব কেন, আমরা যখন আছি। আমরা ! বহুবচনের অন্তত আধখানা অংশ এই হতভাগা শ্ৰীবিলাস। পৃথিবীতে এক দলের লোককে দুঃখ হইতে বাচাইবার জন্য আর-এক দলকে দুঃখ পাইতে হইবে। এই দুই জাতের মানুষ লইয়া সংসার । আমি যে কোন জাতের দামিনী তাহা বুঝিয়া লইয়াছে। যাক, দলে টানিল এই আমার সুখ । শচীশকে গিয়া বলিলাম, বেশ তো, শহরে এখনই নাই গেলাম। নদীর ধারে ওই যে পোড়ো বাড়ি আছে ওখানে কিছুদিন কাটানো যাক। বাড়িটাতে ভূতের উৎপাত আছে বলিয়া গুজব, অতএব মানুষের উৎপাত ঘটিবে না । শচীশ বলিল, আর তোমরা ? আমি বলিলাম, আমরা ভূতের মতোই যতটা পারি গা-ঢাকা দিয়া থাকিব । শচীশ দামিনীর মুখের দিকে এক বার চাহিল। সে চাহনিতে হয়তো একটু ভয় ছিল । দামিনী হাত জোড় করিয়া বলিল, তুমি আমার গুরু । আমি যত পাপিষ্ঠ হই আমাকে সেবা করিবার অধিকার দিয়ে । रे ټیتا যাই বল আমি শচীশের এই সাধনার ব্যাকুলতা বুঝিতে পারি না। একদিন তো এ জিনিসটাকে হাসিয়া উড়াইয়া দিয়াছি, এখন আর যাই হোক হাসি বন্ধ হইয় গেছে । আলেয়ার আলো নয়, এ যে আগুন। শচীশের মধ্যে ইহার দাহট যখন দেখিলাম তখন ইহাকে লইয়া জ্যাঠামশায়ের চেলাগিরি করিতে আর সাহস হইল না । কোন ভূতের বিশ্বাসে ইহার আদি এবং কোন অস্তুতের বিশ্বাসে ইহার অস্ত তাহা লইয়া হাৰ্বার্ট, স্পেন্সরের সঙ্গে মোকাবিলা করিয়া কী হইবে— স্পষ্ট দেখিতেছি