পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سراما ) জিজ্ঞাস্য এই যে, বাসী শব্দ যে প্রত্যয় যোগে ঈ গ্রহণ করিয়াছে, তাহাকে ঈ প্রত্যয় ন। বলিয়। ইন প্রত্যয় কেন বলা হইয়াছে। ইন প্রত্যয়ের নট মাঝে মাঝে বাসিন বাসিনী’ রূপে বাহির হইয় পড়ে বলিয়াই তো ? যদি কোথাও কোনো অবস্থাতেই সে ন না দেখা যায় তৰু কি ইহাকে ইন প্রত্যয় বলি। ব্যাঙাচির লেজ ছিল বটে, কিন্তু সে লেজটা খসিয়া গেলেও কি ব্যাঙকে লেজবিশিষ্ট বলিতে হইবে । কিন্তু পণ্ডিতমশায় বলেন, সংস্কৃত মানী শব্দও তো বাংলায় ‘মানিন হয় না। আমাদের বক্তব্য এই যে, কেহ যদি সেইভাবে কোথাও ব্যবহার করেন, তাহাকে কেহ একঘরে করিবে না ; অন্তত মানী শব্দের স্ত্রীলিঙ্গে ‘মানিনী হইয় থাকে। কিন্তু স্ত্রীবিদ্যালয়ের মসীচিহ্নিত বালিকাকে যদি ‘দাগিনী’ বলা যায়, তবে ছাত্রীও ই করিয়া থাকিবে, তাহার পণ্ডিতওঁ টাকে হাত বুলাইবেন। তখন বৈয়াকরণ পণ্ডিতমশায় উলটিয়া বলিবেন, দাগ কথাটা যে বাংলাকথা, ওটা তো সংস্কৃত নয়, সেইজন্য স্ত্রীলিঙ্গে তাহার ব্যবহার হয় না। ঠিক কথা, যেমন বাংলায় বিশেষণশব্দ স্ত্রীলিঙ্গরূপ পরিত্যাগ করিয়াছে, তেমনই বাংলায় ইন প্রত্যয় তাহার ন বর্জন করিয়৷ ই প্রত্যয় হইয়াছে। ভালো, একটি সংস্কৃত কথাই বাহির করা যাক। ভার শব্দ সংস্কৃত। তবু আমাদের মতে ‘ভারি কথায় বাংলা ই প্রত্যয় হইয়াছে, সংস্কৃত ইন প্রত্যয় হয় নাই। তাহার প্রমাণ এই যে, ‘ভারিণী নৌকা লিখিতে পণ্ডিতমশায়ের কলমও দ্বিধা করিবে। ইহার কারণ আর কিছুই নয়, মানী কথাটা প্রত্যয় সমেত সংস্কৃতভাষা হইতে পাইয়াছি, ভারি কথাটা পাই নাই ; আমাদের প্রয়োজনমতে। আমরা উহাকে বাংলা প্রত্যয়ের ছাচে ঢালিয়া তৈরি করিয়া লইয়াছি । মাস্টার কথা আমরা ইংরেজি হইতে পাইয়াছি, কিন্তু মাস্টারি (মাস্টার-বৃত্তি ) কথায় আমরা বাংলা ই প্রত্যয় যোগ করিয়াছি। এই ই ইংরেজি mastery শব্দের ৮ নহে। সংস্কৃত ছাদে বাংলা লিখিবার সময় কেহ যদি ‘ভো স্বদেশিন লেখেন, তাহাকে অনেক পণ্ডিত সমালোচক প্রশংসা করিবেন, কিন্তু কেহ যদি 'ভো বিলাতিন লিখিয়া রচনার গাম্ভীর্যসঞ্চার করিতে চান, তবে ঘরে-পরে সকলেই হাসিয়া উঠিবে। কেহ বলিতে পারেন ‘বিলাতি সংস্কৃত ই প্রত্যয়, ইন প্রত্যয় নহে । আচ্ছ, দোকান যাহার অাছে সেই ‘দোকানি’কে সম্ভাষণকালে ‘দোকানিন’ এবং তাহার স্ত্রীকে ‘দোকানিনী’ বলা যায় কি । আর একটা দৃষ্টাস্ত দিই। বাংলায় ‘রাগ' শবের অর্থ ক্রোধ ; সেই রাগ’ শব্দের উত্তর ই প্রত্যয়ে ‘রাগি” হয়। কিন্তু প্রাচীন বৈষ্ণব পদাবলীর কাল হইতে আজ পর্যন্ত পণ্ডিত অপণ্ডিত কেহই রুষ্ট স্ত্রীলোককে “রাগিণী” বলিয়া সম্ভাষণ করেন নাই।