পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ፃ© রবীক্স-রচনাবলী আজ দেখিলে ? তার না আছে ধর্ম, না আছে কর্ম না আছে ভাই, না আছে । না আছে কুলমান ; তার দয়া নাই, বিশ্বাস নাই, লজ্জা নাই, শরম নাই। এই নির্লজ্জ নিষ্ঠুর সর্বনেশে রসের রসাতল হইতে মাতুষকে রক্ষা করিবার কী উপায় তোমরা করিয়াছ ? sist আমি থাকিতে পারিলাম না ; বলিয়া উঠিলাম, আমরা স্ত্রীলোককে আমাদের চতুঃসীমানা হইতে দূরে খেদাইয়া রাপিয়া নিরাপদে রসের চর্চা করিবার ফন্দি করিয়াছি । আমার কথায় একেবারেই কান না দিয়া দামিনী শচীশকে কহিল, আমি তোমার গুরুর কাছ হইতে কিছুই পাই নাই । তিনি আমার উতলা মনকে এক মুহূর্ত শান্ত করিতে পারেন নাই । আগুন দিয়া আগুন নেবানো যায় না। তোমার গুরু যে পথে সবাইকে চালাইতেছেন সে পথে ধৈর্য নাই, বীর্য নাই, শাস্তি নাই । ওই যে মেয়েটা মরিল, রসের পথে রসের রাক্ষসীই তো তার বুকের রক্ত খাইয়া তাকে মারিল । কী তার কুৎসিত চেহারা সে তো দেখিলে ? প্রভু, জোড়হাত করিয়া বলি, ওই রাক্ষসীর কাছে আমাকে বলি দিয়ে না। আমাকে বাচাও । যদি কেউ আমাকে বাচাইতে পারে তো সে তুমি । ক্ষণকালের জন্য আমরা তিন জনেই চুপ করিয়া রহিলাম। চারি দিক এমনি স্তন্ধ হইয়া উঠিল যে আমার মনে হইল, যেন ঝিল্লির শব্দে পাণ্ডুবৰ্ণ আকাশটার সমস্ত গা ঝিম্ ঝিম্ করিয়া আসিতেছে। শচীশ বলিল, বলে আমি তোমার কী করিতে পারি ? দামিনী বলিল, তুমিই আমার গুরু হও। আমি আর কাহাকেও মানিব না। তুমি আমাকে এমন কিছু মন্ত্র দাও য। এ সমস্তের চেয়ে অনেক উপরের জিনিস– যাহাতে আমি বাচিয়া যাইতে পারি। আমার দেবতাকেও তুমি আমার সঙ্গে মজাইয়ো না । শচীশ স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া কহিল, তাই হইবে । দামিনী শচীশের পায়ের কাছে মাটিতে মাথা ঠেকাইয়া অনেক ক্ষণ ধরিয়া প্রণাম করিল। গুন গুন করিয়া বলিতে লাগিল, তুমি আমার গুরু, তুমি আমার গুরু ! আমাকে সকল অপরাধ হইতে বাচাও, বাচাও, বাচাও !