পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী । אס\8 নরনারী যখন সর্বাঙ্গীণ পরিস্ফুটতা লাভ করে হিসাবমতে তখনই তাহারা জাতিরক্ষার জষ্ঠ জননশক্তি প্রয়োগ করিবার অধিকারী হয়। আমাদের সভাপতি মহাশয় বলিয়াছেন— যেমন দাত উঠিলেই অমনি ছেলেদের খুব শক্ত জিনিস খাইতে দেওয়া উচিত হয় না, তেমনই যৌবন সঞ্চার হইবামাত্র স্ত্রীপুরুষ সস্তান-উৎপাদনের যোগ্য হয় না। এ বিষয়ে বড়ো বড়ো ডাক্তারদের মত এতবার সাধারণের সমক্ষে স্থাপিত হইয়াছে যে, এ স্থলে অন্ত পণ্ডিতের মত উদ্ধৃত করা অনাবশ্বক। স্বশ্ৰুতসংহিতার সহিত এ বিষয়ে পাশ্চাত্য শাস্ত্রের সম্পূর্ণ ঐক্য আছে, তাহাও সকলে অবগত আছেন— অতএব শাস্ত্র-আস্ফালন করিয়া প্রবন্ধবাহুল্যের প্রয়োজন দেখিতেছি না । যাহা হউক, কাহারও কাহারও মতের সহিত না মিলিলেও ইহা স্বীকার করিতেই হইবে যে, অভিজ্ঞ বৈজ্ঞানিক মান্ত ব্যক্তিগণ বৈজ্ঞানিক কারণ দর্শাইয়া বলিয়া থাকেন যে, যৌবনারম্ভ হইবামাত্রই অপত্যোৎপাদন স্ত্রী পুরুষ এবং সস্তানের শরীরের পক্ষে ক্ষতিজনক। অতএব বিজ্ঞানের পরামর্শ লইতে গেলে বাল্যবিবাহ টেকে না। ’ শিক্ষিত সমাজের মধ্যে র্যাহারা বাল্যবিবাহের পক্ষে তাহাদের মধ্যে দুই দল আছেন। একদল মন্থর ব্যবস্থাহুসারে পুরুত্বের ২৪ হইতে ৩০-এর মধ্যে এবং স্ত্রীলোকের ৮ হইতে ১২-র মধ্যে বিবাহ দিতে চান, আর-এক দল, স্ত্রী পুরুষ উভয়েরই বাল্যাবস্থায় বিবাহে কোনো দোষ দেখেন না । ‘পারিবারিক প্রবন্ধ' নামক একখানি পরমোৎকৃষ্ট গ্রন্থে মান্থাবর লেখক ‘রাল্যবিবাহ’ নামক প্রবন্ধে প্রথমে মনুর নিয়মের প্রশংসা করিয়া তাহার পরেই লিখিতেছেন : ছেলেবেলা হইতে মা বাপ যে দুটিকে মিলাইয় দেন, তাহারা একত্র থাকিতে থাকিতে ক্রমে ক্রমে দুইটি নবীন লতিকার স্তায় পরস্পর গায়ে গায়ে জড়াইয়া এক হইয় উঠে । তাহাদিগের মধ্যে যে-প্রকার চিরস্থায়ী প্রণয় জন্মিবার সম্ভাবনা, বয়োধিকদিগের বিবাহে সেরূপ চিরস্থায়ী প্রণয় কিরূপে জন্মিবে। অতএব পুরুষের অধিক বয়সে বিবাহ লেখকের অভিমত কি না তাহা স্পষ্ট বুঝা গেল না। কিন্তু শ্রদ্ধাস্পদ চন্দ্রনাথ বস্থ বলেন, যখন স্ত্রীকে স্বামীর সহিত সম্পূর্ণ মিশিয়া যাইতে হইবে, তখন স্বামীর পরিণতবয়স্ক হওয়া আবশ্বক । কারণ : যাহাকে এই কঠিন এবং গুরুতর মিশ্রণকার্য সম্পন্ন করিতে হইবে তাহার জ্ঞানবান বিদ্যাবান এবং পরিণতবয়স্ক হওয়া চাই, এবং যাহাকে এই রকম হাড়েহাড়ে মিশিতে হইবে তাহার শিশু হওয়া একান্ত আবস্তক। তাই হিন্দুশাস্ত্রকারদিগের মতে পুরুষের বিবাহের বয়স বেশি, স্ত্রীর বিবাহের বয়স কম । চব্বিশে এবং আটে বিবাহ হইলে হাড়ে হাড়ে কঠিন এবং গুরুতর মিশ্রণ হইতেও